সুস্বাগত বন্দ্যোপাধ্যায়ের
পর্ব-৫
ফাগুয়ার রঙ চার্ণকের জীবনে মনে থাকবে। ভিন দেশী নারীর মোলায়েম হাতে দুগালে আদুরে রঙের
আলপনা।বত্রিশ বছর বয়সে বসন্তের এমন এক দিন,তাঁর জীবনে আগেতো আসে নি। হোলি কা দহনে যে রঙের আগুন জ্বলেছে,দুলান্দির রঙের জলে সে আগুন নিভে নি।আগুনের লেলিহান শিখা জলের কাছে মাথা নত করে।কিন্ত রঙ দে মিলান্তির আগুন কে নেভাবে?
মিলান্তির আগুনে পুড়ে গেল জোব সাহেবের একাকীত্বের হতাশা। দেহে উষ্ণতার আমেজ।স্বপ্নিল আবেগ-আবেশে বিভোর।
মাথার ওপর সূর্যের গনগনে আগুনে ব্রিটিশ শ্বেতাঙ্গের গায়ের রঙ তামাটে,মুখ- চোখ লাল হয়ে গিয়েছে। কিন্ত মনের মধ্যে এই বৃটিশ পুরুষের
বাসনা সুখের আনন্দ। ঈষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির 'our agent and Factors'হবার আগে ইংল্যান্ডে থাকালীন জেনে এসেছে নারী মদনের আগুন। বহু নারীর লাস্য রস পান পৌরষত্বের গৌরব। এদেশে চার্ণক সাহেব চলে এসেছে ছাব্বিশ বছর বয়সে।কোম্পানীর রেকর্ডে ২৭শে ফেব্রুয়ারি ১৬৫৭।
হুগলির কাশিমবাজার কুটিতে এদেশে পা দেবার পর তাঁর সাথে পরিচয় হয়েছিল দশ বছরের মেরী
এনের।এনের মা মুসলিম ,বাবা পর্তুগীজ। মদের গ্লাস হাতে দিয়ে গালে চুমু দিয়েছিল। এলিয়ট ঠাট্টা
করে বলেছিল, বছর দুয়েক বাদে এনের বাড়ন্ত শরীর তাঁর সাথে ভালই মানাবে। এনের প্রতি তাঁর বাৎসল্য স্নেহ রয়েছে ,এর বেশী কিছু নয়।
ফ্যাক্টরির কুঠিতে ফিরে এলো।মনে বড়ই ফুর্তি। সুখের এই অনুভূতি একাই ভোগ করা যায়,ভাগ হয় না।চানের আগে এক পেগ স্কচ । বোতল থেকে পেগের গ্লাসে মদ ঢালতে ঢালতে স্কচের গন্ধ নাকে পাচ্ছে না। মোতিয়ার গায়ের গন্ধ চার্ণকের শরীর মনে লেগে আছে যে।
কাশিমবাজার-বালেশ্বর- পাটনার সিঙ্গিয়া কোম্পানীর এজেন্ট হয়ে সাত বছর একই কাটিয়েছে।রাতের পর রাত
কুঠীতে পর্তুগীজ-আর্মেনিয় ফরাসী মেমের মদের সাথে দুবাহু জরিয়ে দুঠোঁটের ফাঁক দিয়ে আলজিবে চুম্বন করেছি,শরীরের ক্ষিদে মিটেছে, কিন্ত মদিরা-মিথুনের নেশা রাতের অন্ধকারে হারিয়ে গিয়েছে ,চার্ণকের জীবন খাতার ইতিহাস হয় নি।মোতিয়ার আবিরের স্পর্শ জীবন স্মৃতি নয়,দিল কা বাত।
কোম্পানীর ফ্যাক্টরি বন্ধ।বিহারী খালাসি,মুঠেরা সরাবের নেশায় বুঁদ। শিউচরণ ও বিলিতি পেগের টানে আজ আসবে না।একা জোব সাহেব ,তবে একা নয়,আছে পাথরের টেবিলে বিলিতি বোতল আর মোতিয়া কে দেখার বাসনা বেদনার অন্তসলিলা হিল্লোল।
বসন্ত পূর্ণিমার সন্ধ্যা ।কোম্পানীর কুঠীর সামনে দেবদারু,
ইউক্যালিপটাস, বাবলা কাঁটার ঝোপ জ্যোৎস্নার আলোয় ঢেকে দিয়েছে। মহুয়া ফুলের গন্ধে ম-ম করছে।এই সময় যদি মোতিয়া থাকত...
নিশি পদ্মের চোখের জলে মোম জোছনায় প্রেম কি উষ্ণ প্রসবিনী না হয়ে থাকতে পারে!
মধু যামিনী খুলে দেয় তার কালো শাড়িতে ঢাকা
শরীর।
প্রদীপের আলোটা কখন যে নিভেছে সে টের পায় নি। মহুয়ার গন্ধ আর স্কচের নেশায় বেসামাল জোব। ইংল্যান্ড থেকে আসার সময় hunter case পকেট ঘড়িটা নিয়ে এসেছিল। রাতের অন্ধকার ফিকে হয়ে আসছে। দেবদারু গাছের মাথার ওপর থেকে মোম জোছনার আলো
তাঁর ঘরের সামনে এসে পড়েছে। জ্যোৎস্নার আবছায়া আলোয় ঘড়িটা হাতে নিয়ে দেখে তিনটে বাজে।আশেপাশের জঙ্গল থেকে ভেসে আসছে বন্য পশুদের চিৎকার। আত্মরক্ষার জন্য ইংল্যান্ড
থেকে দুনালা বন্দুক নিয়ে এসেছে।তার প্রয়োজন নেই। জোছনা- যামিনীর এই নির্বাক প্রেম বন্দুকের গর্জনে পাছে ব্যঘাত ঘটে?প্রেমে হিংসে হয়, হিংসায় প্রেম নেই।