ভারতে ইএনটি চিকিৎসার নেতৃত্বে বাংলা

কলকাতা ১৮ ই ফেব্রুয়ারি২০২৪:
আজকাল স্মার্ট ফোন খুললে দেখা যায় দেশের বিভিন্ন শহরের দূষণের মাত্রা এতটাই বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছেছে যে মানুষকে ঘর থেকে বেরতে বারন করা হচ্ছে, বাস্তবে যেটি মেনে চলা বোধহয় কারো পক্ষেই সম্ভব হয় না। এর অবশ্যম্ভাবী ফল হিসাবে দেশে বাড়ছে দূষণজনিত অ্যালার্জি, হাঁপানি, সিওপিডি বা সাধারণ সর্দিকাশির প্রকোপ। এর সঙ্গে অন্যান্য নাক কান গলার সমস্যা তো আছেই বাড়ছে হেড অ্যান্ড নেক, ল্যারিঙ্গম ও ভোকাল কর্ডের ক্যানসারও। ভিড় বাড়ছে হাসপাতালের আউটডোর আর ইএনটি ক্লিনিকগুলিতে। আজকের চিকিৎসা বিজ্ঞান অনেক উন্নত। অনেক আপাত অসম্ভবও আজ সম্ভব বা সাধারণ হয়ে গেছে। নাক কান গলা শাখাও এদিক থেকে পেছিয়ে নেই। দরকার জনসাধারন ও চিকিৎসা জগতের মানুষের সচেতনতা, আর আমাদের মতো উন্নতশীল এশিয় দেশের জন্য কার্যকরী গাইডলাইন। আজকে দেশের ইএনটি চিকিৎসাকে আরো গতিশীল ও ফলপ্রদ করতে এটি প্রয়োজন।

সৌভাগ্যের কথা ও বাংলার পক্ষে গর্বের বিষয় যে এই ভাবনাটা প্রথম ভেবেছেন দেশের ইএনটি বিশেষজ্ঞদের জাতীয় সংগঠন দি অ্যাসোসিয়েশন অফ ওটোল্যারিঙ্গোলজিস্ট অফ ইন্ডিয়া’ (এওআই)এর নব নির্বাচিত ছিয়াত্তর বছরের ইতিহাসে কণিষ্ঠতম বাঙ্গালি সভাপতি ডা. দ্বৈপায়ণ মুখার্জি। হ্যাঁ বহু বছর পর দেশের কোন চিকিৎসক সংগঠনের জাতীয় সভাপতি বাংলা থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। কলকাতা প্রেস ক্লাবে একটি অনুষ্ঠানে এওআইএর পশ্চিম বঙ্গ শাখার পক্ষ থেকে ডা. মুখার্জিকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। এই উপলকে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে সংস্থার পশ্চিম বঙ্গ শাখার সভাপতি ডা. অমিতাভ রায়চৌধুরী বলেন আজ বাংলার চিকিৎসকদের কাছে একটি গর্ব ও আনন্দের দিন, দেশের ইএনটি চিকিৎসার নীতি নির্ধারণে ও কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বাংলা একটি গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা

সংস্থার রাজ্য সম্পাদক ডা. স্নেহাশীষ বর্মণ বলেন বাঙ্গালোরে আয়োজিত এন্ডআইএর গত জাতীয় সম্মেলনে দেশের সমস্ত ইএনটি চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে সর্বসম্মতিক্রমে ডা দ্বৈপায়ণ মুখার্জিকে জাতীয় সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। এর আর একটি উজ্জ্বল দিক হল এই নির্বাচনের ফলে সংগঠণের ঐতিহ্যমন্ডিত অন্তর্জাতিক মানের গবেষণা পত্রিকা বা ইন্ডেকস জার্নাল ‘ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ ওটোল্যারিঙ্গোলজি অ্যান্ড হেড অ্যান্ড নেক সার্জারি’র জাতীয় কার্যালয় ভোপাল থেকে ছয় বছরের জন্য পশ্চিমবঙ্গ তথা কলকাতায় স্থানান্তরিত হবে। উল্লেখ্য এমডি থেকে চিকিৎসাবিদ্যায় ডক্টরেট বা ডিএম হতে গেলে কিংবা মেডিক্যাল কলেজের লেকচারার থেকে অধ্যাপক পদে উন্নীত হতে গেলে কোন রোগীর নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসায় বা বিশেষ কোন বিষয়ে আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাপত্র এই ধরণের জার্নালে প্রকাশ করা আবশ্যিক। জানাল অফিস কলকাতায় চলে এলে আমাদের এই ভালবাসার শহরেই সারা দেশের ইএনটি চিকিৎসকদের পেশ করা গবেষণাপত্রের মান নির্ণয় ও

প্রকাশের কাজ করা হবে।

এছাড়াও সভায় উপস্থিত রাজ্য শাখার প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট ডা. উৎপল জানা, কোষাধ্যক্ষ তরুণ চিকিৎসক ডা. অজয় খাওয়াস, স্টেট জার্নালের সম্পাদক ডা. বিধান রায় ও রাজ্য এডিটোরিয়াল বোর্ডের চেয়ারম্যান ডা. সৌমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রভৃতি উপস্থিত ইএনটি বিশেষজ্ঞরা তাঁদের বক্তব্য রাখেন।

ডা. দ্বৈপায়ন মুখার্জি তাঁর ভাষনে উপস্থিত সকলকে ও দেশের সমস্ত ইএনটি বিশেষজ্ঞদের তাঁকে মনোনিত করার জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন এখানে সব চিকিৎসা হয় ইউরোপিয় ও আমেরিকান মত অনুসারে, দরকারে সাহায্য নেওয়া হয় ঐ সব দেশেরই তথ্য সমূহের। কিন্তু আমাদের দেশের আবহাওয়া, মানুষের শারীরিক গঠন, রীতিনীতি সবকিছুই পাশ্চাত্যের থেকে আলাদা। তাই চিকিৎসা বিজ্ঞানের সব শাখাতেই ভারতীয়দের জন্য একটি গাইড লাইন থাকা জরুরী। এর পাশাপাশি নাক কান গলা শাখার চিকিৎসা সংক্রান্ত স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহের কাজও খুব শিঘ্রই শুরু করা হবে বলেও তিনি জানান। তবে আধুনিক উন্নততম চিকিৎসা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে গেলে প্রয়োজন জনগণ ও সাধারণ চিকিৎসকদের সচেতনতা। এবিষয়ে দেশজোড়া বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক প্রচার ও চিকিৎসকদের জন্য বিভিন্ন সিএমই, ওয়ার্কশপ প্রভৃতি আরম্ভ করার পরিকল্পনাও রয়েছে তাঁর। পরিশেষে তিনি এ বিষয়ে তাঁর সকল সতীর্থ ও সংবাদ মাধ্যমের সহযোগীতা প্রার্থনা করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *