কলকাতা, ৩১শে মে ২০২৫: বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষে, পূর্ব ভারতের বৃহত্তম হাসপাতাল নেটওয়ার্ক মনিপাল হসপিটালস এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ইন্ডিয়ান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ), কলকাতা চ্যাপ্টার-এর সহযোগিতায় এবং কেএসডি জৈন ডেন্টাল কলেজের সহায়তায়, একটি জনসচেতনতা মূলক সভা আয়োজন করা হয় কলকাতার উত্তম মঞ্চে। তামাক সেবনের ক্ষতিকর প্রভাব ও মুখগহ্বর ক্যান্সার প্রতিরোধে আগাম শনাক্তকরণের গুরুত্ব তুলে ধরাই ছিল এই অনুষ্ঠানের মুখ্য উদ্দেশ্য।
এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার মাননীয় সদস্য শ্রী দেবাশিস কুমার, সম্মানীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট পরিচালক, লেখক ও অভিনেতা শ্রী শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রাবন্তী চ্যাটার্জি এবং সৌরসেনী মৈত্র। উপস্থিত ছিলেন ডঃ অয়নাভ দেবগুপ্ত, আঞ্চলিক প্রধান (পূর্ব), মনিপাল হসপিটালস এবং মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের (মনিপাল হসপিটালস গ্রুপের অংশ) বিশিষ্ট অনকোলজি চিকিৎসকগণ।
মনিপাল ফাউন্ডেশন, তাদের প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবার অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে, আইডিএ কলকাতা চ্যাপ্টার-এর সঙ্গে যৌথভাবে কলকাতা পৌর সংস্থার একাধিক ওয়ার্ডে বিনামূল্যে ক্যান্সার স্ক্রিনিং ক্যাম্প চালু করতে চলেছে। এই ক্যাম্পগুলির লক্ষ্য হবে প্রাথমিক স্তরে ক্যান্সার সনাক্ত করা এবং সময়মতো হস্তক্ষেপ ও চিকিৎসার মাধ্যমে রোগের বিস্তার রোধ করা।
শ্রী দেবাশিস কুমার বলেন— “আমাদের শহরে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে দেখে আমি গর্বিত। মণিপাল হাসপাতাল, মনিপাল ফাউন্ডেশন, আইডিএ (কলকাতা চ্যাপ্টার), এবং কেএসডি জৈন ডেন্টাল কলেজের এই সম্মিলিত প্রচেষ্টা জনস্বাস্থ্যের প্রতি একটি দায়িত্বশীল পদক্ষেপ। কলকাতা পৌর সংস্থার ১৪৪টি ওয়ার্ড এবং সংশ্লিষ্ট ১৪৪টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র মণিপাল হাসপাতাল বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে মিলে জনসচেতনতা ও ক্যান্সার স্ক্রিনিং-এ অংশগ্রহণ করবে। চিকিৎসার পাশাপাশি এই উদ্যোগ নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে তামাক সেবনের প্রবণতা হ্রাসে সাহায্য করবে। সরকার ও বেসরকারি খাতের এই সমন্বয় ভবিষ্যতের জন্য এক সুস্থ সমাজ গঠনে পথপ্রদর্শক হবে।”
ডঃ সৌরভ দত্ত, সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও ডিরেক্টর, মেডিক্যাল অনকোলজি, মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল বলেন— “ভারতে প্রতি বছর প্রায় ১৩.৫ লক্ষ মানুষ তামাক ব্যবহারজনিত কারণে প্রাণ হারান, যা দৈনিক গড়ে ৩৭০০ জন বা প্রতি ঘণ্টায় ১৫৪ জন। তামাকজনিত মুখগহ্বর ক্যান্সার এখন দেশের অন্যতম প্রধান ক্যান্সার। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা হলে তা প্রতিরোধ সম্ভব। কলকাতা পৌর সংস্থা, আইডিএ কলকাতা চ্যাপ্টার ও মণিপাল হাসপাতাল ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় আমরা একটি বড় পরিসরে শহরব্যাপী স্ক্রিনিং ক্যাম্প চালু করছি। আমাদের লক্ষ্য – শহরের প্রান্তিক মানুষদের কাছে পৌঁছে, আগেভাগেই রোগ শনাক্ত করা এবং তামাক বর্জনের সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া।”
শ্রী শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বলেন— “গল্পকার হিসেবে আমাদের দায়িত্ব সমাজকে সচেতন করা। ‘কণ্ঠ’ সিনেমা বানানোর সময়েই আমি তামাকের ক্ষতির বার্তাটি পৌঁছে দিতে চেয়েছিলাম। আজ মণিপাল হাসপাতাল এই মহৎ উদ্যোগের অংশ হতে পেরে আমি গর্বিত।”
ডঃ রাজু বিশ্বাস, সম্মানীয় সম্পাদক, ইন্ডিয়ান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশন (পশ্চিমবঙ্গ শাখা), বলেন—
“তামাক, সে চিবনযোগ্য হোক বা ধূমপানযোগ্য, ক্যান্সারের প্রধান কারণ। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম, যারা ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সী, তারা এই বিপদে বেশি জড়িয়ে পড়ছে। পুরুষ ও মহিলারা সমানভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন। দাঁতের চিকিৎসক হিসেবে আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে অনেক ক্ষেত্রেই ক্যান্সারের লক্ষণ দেখতে পাই। মণিপাল হাসপাতাল হসপিটালস-এর সঙ্গে এই সচেতনতা অভিযানে আমরা তামাকের ক্ষতি সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করে তুলতে চাই। এ ধরনের কমিউনিটি লেভেল স্ক্রিনিং সমাজে দীর্ঘস্থায়ী ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।”
ডঃ অয়নাভ দেবগুপ্ত, আঞ্চলিক প্রধান (পূর্ব), মণিপাল হাসপাতাল, বলেন— “মণিপাল হাসপাতাল বিশ্বাস করে, স্বাস্থ্যসেবা শুধু হাসপাতালের গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ নয়। মণিপাল হাসপাতাল ফাউন্ডেশন, তার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার মাধ্যমে, জনগণের কাছে প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কলকাতা পৌর সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা একটি সুস্থ সমাজ গঠনের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছি।”
মণিপাল হাসপাতালের অনকোলজিস্টরা শহরের বিভিন্ন বরোতে ক্যান্সার স্ক্রিনিং ক্যাম্প পরিচালনা করবেন। একই সঙ্গে যুবসমাজ ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কমিউনিটি আউটরিচ প্রোগ্রামও চালু করা হবে। এই বহুমাত্রিক উদ্যোগের মাধ্যমে, মণিপাল হাসপাতাল আবারও প্রমাণ করলো যে, তামাকজনিত রোগ প্রতিরোধে তারা সবসময় সম্মুখ সারিতে রয়েছে।

