বৃষ্টির কথা আমার কথা

সুবল সরদার

আজ সারাদিন বৃষ্টি দেখব। বৃষ্টির সঙ্গে খেলব। বৃষ্টির সঙ্গে থাকব। বৃষ্টির সঙ্গে কথা বলব। বৃষ্টি আমার মনের কথা। বৃষ্টি আমার চোখের পানি। আমার নয়নের মণি। কোমল ছায়া পৃথিবী থেকে কেমন করে সে ঝরে ঝরে পড়ে। মনে হয় বিরহিনীর চাপা কান্না । অশান্ত পৃথিবীকে শান্ত, প্রসন্ন করে তোলে। চির তৃষিত প্রাণে অমৃত ধারা ঢালে।
বৃষ্টি ভেজা সকাল দিয়ে আজ দিন শুরু হয় । বৃষ্টি ভেজা আঁধার ঘনিয়ে আসে সন্ধ্যা বেলা। এখনো অবিরাম ভাবে অভিরাম টাপুর টুপুর শব্দে পড়ে চলেছে যেন সুরের মূর্ছনা লাগে মর্ত্যে । থামার কোন লক্ষণ দেখিনা। মনে হয় সারাদিন দিনের মতো সারা রাতের দখল সে নেবে। সারা দিন সারা রাত আকাশ জুড়ে তার দখলে থাকবে। অবশ্য আগের রাত থেকে ক্লান্তিহীনভাবে সে ঝরে চলেছে। কলোচ্ছ্বাসে, জলোচ্ছ্বাসে নদী -নালা -পুকুর -ঘাট -রাস্তা ঘাট জলময় যেন জলপরীদের দেশে আছি। মনে হয় ভেলা চেপে ঘাটে ঘাটে স্বপ্ন ফেরি করে বেড়াই। বৃষ্টির সঙ্গে খেলে সাঙ্গ হয় আমার দিনের বেলা । বৃষ্টি বৃষ্টি খেলা কী মিষ্টি মিষ্টি খেলা! ঘরের দরজা জানালা সব খোলা। বৃষ্টির ঝাপটা আসুক, আমাকে জড়িয়ে ধরুক দামাল মেয়ের মতো।
বৃষ্টি ভেজা অরণ্য প্রেমের কাব্য লেখে । বৃষ্টি ভেজা নদী গলা ছেড়ে গান ধরে। বৃষ্টি ভেজা ঝর্ণা পাহাড়ের কথা ভুলে ছুটে চলে নতুন কোন দেশে। ভগীরথ ভাগীরথীকে মর্ত্যধামে নিয়ে আসে কিন্তু পৃথিবীতে বৃষ্টিকে কে এনেছিল ! যদি প্রশ্ন করে এ পৃথিবীতে ঈশ্বরের সবচেয়ে বড় উপহার কি? নদী,পাহাড়, ঝর্ণা,অরণ্য,বৃষ্টি । বৃষ্টি তার অপূর্ব সৃষ্টি। নদী -পাহাড় -অরণ্য- সকলের জন্য বৃষ্টি আসে। বৃষ্টি ভিজে তারা সুখ খোঁজে। দুঃখ, কষ্ট ভুলে আনন্দ পায়। বৃষ্টি তাদের সকলের বন্ধু হয়। অলির মতো বৃষ্টিও ফুলের বন্ধু। তাই বন্ধনহারা হয়ে পাপড়ি মেলে বৃষ্টি ধারা পান করে। একফোঁটা জল বিন্দু পান করে অমৃত ধারার মতো নবরাগে জেগে ওঠে। পৃথিবী চির সবুজ হয় । চির কিশোরীর মতো মায়া মুগ্ধতায় আবিষ্ট করে মন । বৃষ্টি আমার প্রাণের ছোঁয়া। যৌবনে ঢলঢল লাবণ্য ভরা। বৃষ্টি একটা অবসর মুখর দিন রচনা করে। রাতের আকাশের তারাদের জলসার মতো বৃষ্টি একটা সঙ্গীতমুখর দিন রচনা করে। এমন দিনে তারে বলা যায় – বৃষ্টির দিনে একলা মনে
তোমায় খুঁজি সারাক্ষণে ।
বৃষ্টি মানে বৃষ্টির রচনা,
বৃষ্টি মানে তোমায় নিয়ে কবিতা লেখা।
বৃষ্টি মানে ভাবনা নয়, শুধু কবিতা। বৃষ্টি সৃষ্টির কথা বলে, তাই এতো মিষ্টি মিষ্টি। বৃষ্টি যদি কখনো মেঘের সঙ্গে ঝগড়া করে আমাদের মতো স্ট্রাইক করে ! সে যদি বলে সে আর ঝরবে না পৃথিবী পরে , তখন এই পৃথিবীর কী হবে! বৃষ্টির সঙ্গে কোনো সৌভাগ্যবানের প্রথম পরিচয় হয়েছিল এই পৃথিবীতে ! কেমন ছিল সেই অনুভূতি!
বৃষ্টি আমার রামধনু রাঙা অনুভূতির ছোঁয়া যেন অনুরাগে ভরা । বৃষ্টি মানে মেঘমল্লারদের মেঘের ভেলা। বৃষ্টি আমার শিউলি ভেজা সকাল। বৃষ্টি মানে পাগল হাওয়ায় এলোমেলো হওয়া । বৃষ্টি মানে রবি ঠাকুরের ‘কৃষ্ণকলি’। বৃষ্টি যেন ‘যেঘদূতে’র বিরহ সঙ্গীত। বৃষ্টি যেন ফুলের সপ্ত রথ কাশফুলের সোহাগের দোলা। বৃষ্টি যেন প্রিয়ার হাসি মিষ্টি সুরে প্রাণে বাজায় বাঁশি। বৃষ্টি মানে মনের কথা যেন চোখের জলে হৃদয় লেখা। বৃষ্টি মানে সারাদিন শুধু তোমার সঙ্গে কথা আর জল ছবি আঁকা । বৃষ্টির কথা সবার কথা কিন্তু আমার কথা শুধু বৃষ্টির কথা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *