শুভ শারদীয়া

সুবল সরদার

আজ ষষ্ঠীর বোধন ,
ছন্দে ছন্দে গানে গানে ভরিছে গগন।
আজি এ প্রভাত রৌদ্র দীপ্ত ঝলমল ,
দীঘিতে ফুটেছে কমল।
পাখিরা মেলেছে ডানা ,
বহিছে মুক্তির হাওয়া।
কাশবনে লেগেছে দোলা ,
জগৎ জননী দেবী দুর্গার ওই পদ ধ্বনি যায় শোনা।

তারপর কি হবে ? সকাল হবে। সূর্য উঠবে। পাখি গান গাইবে। নদী বইবে। এমন সময় শঙ্খ বাজবে। দেবী আসবেন। ধূসর পৃথিবী মঙ্গলময় হয়ে উঠবে আনন্দধারায় । তখন শরতের বনে কাশ ফুল দোল খাবে। শিউলি ফুটবে । দীঘিতে পদ্ম ফুটবে । প্রভাতে শিশির ভিজে পাপড়ি মেলবে। দেবীর ডাকের সাজের মতো প্রকৃতিও নবরূপে সেজে উঠবে । মন্ডপ থেকে ঢাকের আওয়াজ আসবে। দূর নীলিমা থেকে আগমনী শোনা যাবে ‌। বাতাসে হিল্লোল লাগবে । ক্লান্ত মেঘ শুধু ক্লান্তিতে ভরা। বর্ষণে তাদের নেই কোন তাড়া। মনে হয় তারা পথহারা একা একা। শরতের আকাশে হিমের পরশ রচনা করে । শিশির ভেজা ঘাসে তার পত্র লেখা । তার জন্যে অপেক্ষা করা । পুজোতে তার সঙ্গে হবে দেখা । ছুটি ছুটি শুধু ছুটি। ছুটিতে ছেলেদের শুধু ছোটাছুটি শিউলি বনে । তখন পুজোর গন্ধ লাগে বাতাসে। দেবী স্বর্গ থেকে মর্ত্যে পা রাখবেন। ধরা শুচি হবে। মাহেন্দ্রক্ষণে দেবীর চক্ষু দান হবে। মৃন্ময়ী থেকে চিন্ময়ী রূপে দেবী পূজিতা হবেন। ভাবনায়, কল্পনায়, রূপায়ণে দেবী চিত্রে চিত্রিত হবেন । শিল্প ব্যঞ্জনায় সজ্জিতা হন । শরতের আবহে দেবী জগৎ জননী শারদীয় হয়ে ওঠেন। পুজো একরাশ আনন্দ দান করে। সুখ দুঃখের গল্প করে । ফ্লাশ ব্যাক হয়ে ছোটো বেলার স্মৃতি ফিরে আসে, কৈশোরের প্রেম আসে,অতীতের- মন -খারাপ -কথা গল্প বলতে আসে । পুজো এলেই তারা আসে। মনে হয় অবসরের কোন ক্লান্তি নেই। পুজো শেষ হলে মনে হয় পুজো শুধু পুজোর জন্যেই হয় । তখন শূণ্য মন্ডপ, কাপড়, বাঁশ ,কাঠ ,বাসি ফুল পড়ে থাকে। হৈচৈ আর নেই, শুধু শূণ্যতা। খাঁ খাঁ করে ওঠে মন। অপেক্ষা করে মন সারা বছরের জন্যে। তাই পুজো মানে এক দীর্ঘ মানসিক শক্তির পরীক্ষা । পুজো মানে শুধু ধূপ, ধুনো মন্ত্রোচ্চারণ নয়,ভক্তি ভলোবাসার নৈবদ্য। আসছে বছর আবার হবে। দেবী চলে যাচ্ছেন নীলকন্ঠ পাখির সঙ্গে কৈলাসে উড়ে কিন্তু সামনের বছরে আবার তিনি ফিরে আসবেন দোলা চেপে । স্বপ্নের রথ চেপে এক রাশ ভালোবাসার ঝুলি নিয়ে। তাই দেবীর ভাসানে অবসান নয় সূচনা বলা যায়। তিনি ফিরে আসেন ভাসানের গানে বিসর্জনের আবহে। তখন ধরণী মেতে ওঠে দেবীকে স্বাগত জানাতে। দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন এই ধারণায় ত্রিকাল নয়ণী, ত্রিভূবন বিজয়িনী দেবী দুর্গার জন্ম। তার অনেক পৌরাণিক কাহিনী থাকতে পারে, অনেক ব্যাখা থাকতে পারে, আঞ্চলিকতা, ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা থাকতে পারে। আধুনিকতা,এ আই র কনসেপ্টও ধরা পড়তে পারে এই প্রতিমা শিল্পে। ভালোবাসার মুহূর্তগুলি ধরা পড়ে অনিন্দ্য সুন্দর হয়ে । আমাদের মুগ্ধ চোখে ধরা দেয় নান্দনিক রূপে । শক্তি আর সৌন্দর্যে তিনি অনন্যা কখন তিনি শতরূপা । ভয় আর ভক্তিতে দেবী পূজিতা হন এই ধরাধামে। দেবী মহামায়ার কৃপা এমনি হয় ‌।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *