লিভার ক্যান্সার সচেতনতা মাস: প্রাথমিক নির্ণয় ও প্রতিরোধের গুরুত্ব

কলকাতা ২১ আগস্ট ২০২৪ – প্রতি বছর অক্টোবর মাস লিভার ক্যান্সার সচেতনতা মাস হিসেবে পালিত হয়, যা এই প্রায়ই উপেক্ষিত রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লিভার ক্যান্সার সারা বিশ্বে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং এই বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করলে প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় ও চিকিৎসার সফলতার হার বাড়ানো সম্ভব। লক্ষণ ও উপসর্গগুলোকে বোঝা, একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখা এবং প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের গুরুত্ব অপরিসীম।

লিভার ক্যান্সারের ক্ষেত্রে প্রাথমিক নির্ণয়ই সুস্থ থাকার হার উন্নত করতে মূল ভূমিকা পালন করে। ব্যক্তিদের নিজেদের স্বাস্থ্যের কোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তনের বিষয়ে সচেতন থাকা উচিত। যেসব উপসর্গকে অবহেলা করা উচিত নয়, সেগুলি হলো: অজানা কারণে ওজন হ্রাস, ক্ষুধামান্দ্য, ক্রমাগত ক্লান্তি, বমি বমি ভাব বা বমি, পেটের ব্যথা বা ফুলে যাওয়া, জন্ডিস (চামড়া বা চোখ হলুদ হওয়া), এবং গাঢ় প্রস্রাব। এই ধরনের কোনো উপসর্গ দেখা দিলে, অবিলম্বে চিকিৎসা পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

নারায়ণা হাসপাতাল, আরএন টেগোর হাসপাতাল, মুকুন্দপুরের মেডিকেল গ্যাস্ট্রো বিভাগের কনসালটেন্ট ডাঃ বিবেক মোহন শর্মা বলেছেন, “লিভার ক্যান্সার বিশ্বব্যাপী ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর তৃতীয় বৃহত্তম কারণ। সিরোসিস আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে এটি মৃত্যুর প্রধান কারণ। এর সাধারণ কারণগুলির মধ্যে রয়েছে হেপাটাইটিস বি এবং সি, অতিরিক্ত মদ্যপান, এবং নন-অ্যালকোহলিক স্টিয়াটো-হেপাটাইটিস (NASH)। প্রতিরোধ এবং প্রাথমিক নির্ণয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমার পরামর্শ হলো, লিভার ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য ভাইরাল হেপাটাইটিসের টিকা নেওয়া ও চিকিৎসা করা, অতিরিক্ত মদ্যপান এড়ানো, স্থূলতা নিয়ন্ত্রণ করা, ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের জন্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণ প্রোগ্রাম চালানো এবং প্রাথমিক নির্ণয়ের জন্য নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার করা।”

লিভার ক্যান্সার বা হেপাটোসেলুলার কার্সিনোমা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। এটি সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী লিভার রোগ (chronic liver disease – CLD) বা সিরোসিসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ঘটে এবং অন্যান্য ক্যান্সার থেকে আলাদা করা প্রয়োজন যা দ্বিতীয়িকভাবে লিভারকে প্রভাবিত করে। সাধারণত বায়োপসির প্রয়োজন হয় না এবং মাল্টিফেজিক সিটি বা এমআরআই এবং সেরাম এএফপি স্তরের মাধ্যমে নির্ণয় করা যায়। প্রাথমিক নির্ণয় একটি রোগীর পূর্বাভাসে বড় পার্থক্য গড়ে তুলতে পারে। সিরোসিস আক্রান্ত রোগীদের নিয়মিত চেকআপ, স্ক্রিনিং ইউএসজি এবং এএফপি স্তরের মাধ্যমে লিভার ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত করা সম্ভব,” বলেছেন নারায়ণা হাসপাতাল – হাওড়া মেডিকেল অনকোলজি ও হেমাটো অনকোলজি বিভাগের ডিরেক্টর ডাঃ বিবেক আগরওয়ালা।”

একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনতে পারে। ফলমূল, শাকসবজি এবং সম্পূর্ণ শস্যযুক্ত একটি সুষম খাদ্য সুস্থ থাকার জন্য অপরিহার্য। নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ সুস্থ ওজন বজায় রাখতে এবং লিভারের কার্যক্ষমতা সমর্থন করে। মদ্যপান সীমিত করা, ধূমপান এড়ানো, এবং ভাইরাল সংক্রমণ যেমন হেপাটাইটিস বি এবং সি থেকে নিজেকে রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ। এছাড়াও, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের কৌশল যেমন মনোযোগ স্থাপন ও বিশ্রাম করলে সামগ্রিক উন্নতি হতে পারে।

প্রতিরোধ শুরু হয় সচেতনতা এবং সক্রিয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে। নিয়মিত চিকিৎসা পরীক্ষা, যার মধ্যে লিভার ফাংশন টেস্ট অন্তর্ভুক্ত, লিভারের অস্বাভাবিকতা প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত করতে সহায়ক হতে পারে। যাদের পরিবারের ইতিহাসে লিভার রোগ রয়েছে বা অন্যান্য ঝুঁকির কারণ রয়েছে, তাদের ব্যক্তিগতকৃত স্ক্রিনিং পরিকল্পনা সম্পর্কে তাদের স্বাস্থ্যসেবাদাতার সাথে পরামর্শ করা উচিত।

চিকিৎসা প্রযুক্তির উন্নতির ফলে লিভার ক্যান্সারের চিকিৎসার বিকল্পগুলোও উন্নত হয়েছে, যার মধ্যে সার্জারি, কেমোথেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি এবং ইমিউনোথেরাপি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। রোগীদের জন্য সঠিক চিকিৎসার পথ নির্ধারণ করতে তাদের স্বাস্থ্যসেবা দলের সাথে বিকল্পগুলি নিয়ে আলোচনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

লিভার ক্যান্সার সচেতনতা মাস একটি সুযোগ আমাদের সকলের জন্য প্রাথমিক নির্ণয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের স্বাস্থ্যকে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার। একসাথে আমরা লিভার ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারি এবং একটি সুস্থ ভবিষ্যত গড়তে পারি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *