সুবল সরদার
সময়ে অসময়ে সুসময়ে দুঃসময়ে দুজনে কতো কাছাকছি ছিলাম। হেসে খেলে আনন্দে কৈশোরের প্রনয় কাব্য গাঁথা নিয়ে । তবুও প্রেম হলো না! তুমি বললে আমি দায়ী, আমি বললে ‘তুমি বললে আমি কেন, সব তুমিই’। দোষ আর দোষ দোষারোপ করে কি হবে। কিভাবে এতোগুলো বছর কেটে গেল! এখনও তোমাকে নিয়ে ভাবি । সেদিন চৈত্রের পড়ন্ত বিকেল । তখন আমি সতীর্থদের সঙ্গে পড়ছিলাম আলিমদার কাছে বাঁকিপুর গ্ৰামে একজনের বৈঠক খানায় ( উনি আমাদের প্রাইভেট টিউটর ছিলেন )। তখন আমাদের নাইন বা টেন হবে। তুমি এলে তোমার দাদার সঙ্গে পড়তে। সবুজ রঙের শালোয়ার কামিজ পরা, সাদা ওড়না। পড়ন্ত রোদে দীপ্ত চোখে। পুলকে, শিহরণে আমি তখন কেমন বিহ্বল। চোখে চোখে প্রথম দেখা। মনের দরজা খুলে হৃদয়ে প্রবেশ করলে প্রনয়নীর বেশে । কল্পনার জগৎ তৈরি হয় । তুমি বলবে এতো দিন সে কোথায় ছিল। রাতের আকাশে যে ফুল ফুটে রাতের আঁধারে মিলিয়ে যায় তার খবর কে রাখে। রাতের আকাশে গন্ধ ঢালা আমি সেই ফুল যে শুধু তোমার জন্যে পাপড়ি মেলে ছিল। এইভাবে আমার জীবনে প্রেম একবার এসেছিল নীরবে হেমন্তের অবিরল হাওয়ার মতন । হয়তো তুমি বুঝতে পেরেছিল, হয়তোবা বুঝতে পেরেও নীরবে ছিলে অপেক্ষায়। পরিস্থিতি কেমন এলোমেলো করে দেয় ,দেখ।
এখনও দুজনে কত কাছে তবুও ,তবু মনে হয় অনেক দূরে ধ্রুবতারার মতো দূর নীলিমায়। আকাশ থেকে পাহাড়ে ,নদী থেকে অরণ্যে এখনও তোমাকে খুঁজি মনে মনে । মনে হয় তুমি সর্বত্র আছো যেদিকে আমার দু’চোখ চোখ যায়। মনে হয় তুমি এক নদী তোমার তীরে বসে সারাদিন গান শুনি। কৈশোরের প্রথম দেখা,প্রথম অনুভুতি ,প্রথম ব্যথা কে ভুলতে পারে? ভেবেছিলাম কখনো তোমাকে জানবো না সে কথা। গোপনে থাক আমাদের গোপন কথা। তোমার ইচ্ছায় আজ নির্দ্বিধায় ,অকপটে স্বীকার করলাম আমার মনের কথা যা তোমারও মনের কথা হবে। এখন গোপন থাকে কই। ফুল দু’টি ঝরে গেলে শুধু মৌনব্রত থাকার জন্যে। তুমি আজ চাকরি করছো। ভালো আছো, ভালো থাক ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি ।
শীলা ,আজও তোমার অভাব বোধ করি। মনে হয় এদিকে গোটা পৃথিবী আর অন্যদিকে তুমি। আমি শুধু তোমার দিকে, শুধু তোমার জন্যে । তোমার চাকরির চিঠি নিয়ে তোমার দাদা সামীম আমাকে বিড়ম্বনা মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। তার প্রশ্ন -দু’টো চিঠি (স্টাফ সিলেকশন পরীক্ষার জন্যে) তোমার আর তোমার দাদার মগরাহাট পোস্ট অফিস থেকে আমি পোস্ট করেছিলাম। তোমারটা এলো, তার কেন আসে নি ? উত্তর ছিল না তাই উত্তর দিই নি । সে ভেবে ছিল আমরা দু’জনে শুধু দু’জনের জন্যে । তার কাছে ভীষণ আমি স্বার্থপর। আজও আমি স্বার্থপর তোমার জন্যে। এ অমৃতের ভোগ তোমার ছাড়া আর কারোর ভাগ নেই। প্রিয়, তোমার জন্যে সেই অমৃতের নৈবেদ্য সাজিয়ে রেখেছি। আমি তোমার জন্যে অপেক্ষা করে আছি। আসবে না? এখন আর স্বপ্ন নয় শুধু তুমি।