সুদীপ্ত ভট্টাচার্য
চেন্নাইয়ে এম এ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামের ২২ গজে ভারত বনাম বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার। এই টেস্টে প্রথম দিনের খেলা শেষে ব্যাট হাতে নায়ক হয়ে উঠলেন দুই ভারতীয় ব্যাটম্যান। যাঁরা অবশ্য প্রকৃত অর্থে প্রথম সারির ব্যাটম্যান নন। প্রকৃয অর্থে তাঁরা দুজনেই হলেন বোলার।
তার মধ্যে একজন আবার এই চেন্নাই শহরের বাসিন্দা। বছর ৩৮-এর এই ক্রিকেটার হলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। দিনের শেষে তাঁর সংগ্রহ অপরাজিত ১০২ রান। উল্টোদিকে ব্যাট হাতে অশ্বিনকে যোগ্য সঙ্গত দিলেন আর এক স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজা । জাড্ডুও অপরাজিত রইলেন ৮৬ রানে।
চেন্নাইয়ের এই টেস্ট ভারতীয় দলের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই মুহূর্তে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইয়ে রয়েছেন রোহিতরা। এছাড়া সামনেই অস্ট্রেলিয়া সফর। সেই গাভাস্কার – বর্ডার ট্রফিতে পাঁচ টেস্টের সিরিজ জিততে পারলে নজির গড়ার পাশাপাশি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের আসরেও রোহিতদে্য জায়গা পাকা হয়ে যাবে।
কাজেই ঘরের মাঠে বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজেদের সেরাটা দিয়ে সিরিজ জয় করে আত্মবিশ্বাসটা আরও বাড়িয়ে নেওয়াই ছিল রোহিতদের মূল উদ্দেশ্য। অন্য দিকে প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ সদ্য পাকিস্তানকে পাক ভূমে নাস্তানাবুদ করে সিরিজ জয় করে এখন আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে। ফলে দুই দেশের লড়াই যে হাড্ডাহাড্ডি হবে তার ইঙ্গিত একটা ছিলই।
এদিন টসে জিতে টাইগার্স অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ভারতকে ব্যাট করতে পাঠান। যা দেখে অনেক ক্রিকেট বিশেজ্ঞই অবাক হয়েছিলেন। দীর্ঘ টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এটা দ্বিতীয় ঘটনা হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এর আগে ১৯৮২ সালে এই চেন্নাস্বামী (তৎকালীন চিপক)-এ ইংল্যান্ড অধিনায়ক ক্লিথ ফ্লেচার টেস্ট ক্রিকেটের ৯০ বছরের ইতিহাসে টসে জিতে পরে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ইতিহাস গড়েছিলেন। এবার সেই রেকর্ড ভাঙলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
বৃহস্পতিবার খেলার শুরুতেই বল হাতে ভারতীয় শিবিরে ধ্বস নামাতে শুরু করেন বাংলাদেশ বোলার হাসান মামুদ। ভারতের সেরা চারজ ব্যাটসম্যান রোহিত, বিরাট, পন্থ এবং তরুণ শুভমনকে চটজলদি প্যাভেলিয়নে ফিরিয়ে দেন তিনি। হাসান ঝড়ের আঁচে তখন পুড়তে শুরু করেছিলেন ভারতের পরবর্তী ব্যাটসম্যানরাও। একটা সময় ভারতীয় ব্যাটারদের আশা -যাওয়ার বহর দেখে মনে হয়েছিল টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে দেশের মাটিতে লজার মুখে পড়বে না তো রোহিত ব্রিগেড। ৮২ সালে সেই টেস্টে টসে জিতে পরে ব্যাট করে ম্যাচ ড্র করেছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতেই যেভাবে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা অসহায় আত্মসমর্পণ করেছিলেন টাইগার্স বোলারদের কাছে তাতে ১০০ রানও হবে কি না সন্দেহ দেখা দিয়েছিল সকলের মনে। এবং টেস্টে টসে জিতে পরে ব্যাট করে ভারতকে তাদের ঘরের মাঠে হারিয়ে ইতিহাস গড়বে না তো বাংলাদেশে? এই আশংকাতেই তখন প্রহর গুনছিলেন অনেকেই।
ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা। কখন কে নায়ক হয়ে আর কে যে কখন খলনায়ক বনে যাবেন তা কেউ বলতে পারে না। ঠিক যেমনটা হল বৃহস্পতিবার । প্রথম দিকে একের পর ছক উইকেট উপহার দিয়ে খলনায়ক হয়ে উঠেছিলেন রোহিত, বিরাট, শুভমনরা। আর এর ঠিক পরেই ম্যাচের ধায়ক হয়ে উঠলেন অশ্বিন ও জাড ভারতীয় ব্যাংকারদের অসহায় আত্মসমর্পণ দেখ ভালো কিছু ঘটার অপেক্ষায় ছিলেন টাইগার্স বাহিনী। কিন্তু তাঁদের সেই বাড়া ভাতে অনেকটা ছাই ঢেলে দিলেন দুই ভারতীয় ব্যাটসম্যান। মূলত তাঁদের ব্যাটিং -এ ভর করেই ভারত আবার লড়াইয়ে ফিরে এল। দিনের শেষে ভারতের সংগ্রহ ৬ উইকেটে ৩৩৯ রান। এখন দেখা যাক এই অশ্বিন -জাড্ডুর জুটিতে ভর করে ভারতের প্রথম ইনিংসের দ্বিতীয় দিনে কতটা এগিয়ে যেতে পারে। কেননা যত দিন যাবে পিচের চেহারারও বদল ঘটবে। এছাড়া নতুন বলে যে হাসান, নাহিদরা ফের ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবেন তা বলাই যায়। দিনের শুরুতে তাঁদের সামলানোটাই এখন চ্যালেঞ্জ অশ্বিন ও জাড্ডুর কাছে।
।