সুদীপ্ত ভট্টাচার্য
কলকাতা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪;শুক্রবার দুপুর। চুঁচুড়া ফেরিঘাটে লঞ্চ পেরিয়ে প্রায় শ খানেক ইস্টবেঙ্গল সমর্থক চলেছেন নৈহাটি স্টেডিয়ামে। তাঁদের প্রিয় দল এদিন কলকাতা প্রিমিয়ার লিগের সুপার সিক্সের ম্যাচে মাঠে নামবে। প্রতিপক্ষ মহমেডান স্পোর্টিং। অর্থাৎ কলকাতা প্রিমিয়ার লিগের মিনি ডার্বি বলে কথা। তাই প্রিয় দলকে সমর্থন করার জন্য
দুপুরের প্রখর রোদের তাপকে উপেক্ষা করে তাঁদের মাঠে আসা। গন্তব্য নৈহাটির বঙ্কিমাঞ্জলী স্টেডিয়াম ।
কিন্তু এদিন লাল হলুদ সমর্থকদের কিছুটা নিরাশ হয়েই বাড়ির পথ ধরতে হল। কেননা শুক্রবার লাল হলুদের জ্বলন্ত মশাল ছিল যেন ছিল বেশ কিটা ম্রীয়মান। আর সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করল রেড রোডের ধারের ক্লাবটি। ভাগ্য ভালো সহায় থাকায় এই ম্যাচে হারের মুখ দেখতে হয়নি বিনোর দলকে। একদিকে দলকে নিশ্চিত পতনের হাত থেকে রক্ষা করা, অন্যদিকে দলকে সমতায় ফেরাতে দলের হয়ে জোড়া গোল করা দুই বিভাগেই ইস্টবেঙ্গলের পরিত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন আদিত্য ও জেসিন। আদিত্য যদি শুক্রবার ম্যাচে তিন তিনবার ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ না হতেন তাহলে হয়তো ম্যাচ হেরেই বাড়ি ফিরতে হত ইস্টবেঙ্গলকে। ভাগ্য সহায় থাকায় শেষ পর্যন্ত ম্যাচ শেষ হল ২-২ গোলে। মহেমেডানের হয়ে স্কোরশিটে নাম তোলেন বামিয়া সমাদ ও রবসন। অন্য দিকে ইস্টবেঙ্গলের জোড়া গোলদাতা হলেন জেসিন টিকে। আজকের ম্যাচে জোড়া গোল করে চলতি বছর কলকাতা লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতার দৌড়ে আরও কিছুটা এগিয়ে গেলেন জেসিন।
সুপার সিক্সের দুটো ম্যাচ জিতে লিগ খেতাব জয়ের দিকে বাকিদের থেকে কিছুটা এগিয়ে ছিল ইস্টবেঙ্গল। ডায়মন্ডের হারবার এফসি ও ভবানীপর দুই ও তিন নম্বরে থাকলেও গতবারের লিগ চ্যাম্পিয়ন মহামেডান ছিল অনেকটাই পিছনে। কাজেই খেতাব জয় নিশ্চিত করতে এই ম্যাচে থেকে পুরো পয়েন্ট তোলাই মূল উদ্দেশ্য ছিল বিনো জর্জের। কিন্তু বিনোর সেই উদ্দেশ্যে সফল হল না।
লিগ খেতাব জয়ের চাপ নেই। কিন্তু তবুও প্রতিপক্ষ দলের নাম ইস্টবেঙ্গল। কাজেই বিপক্ষের কাছে নিজেদের সেরাটা দিয়েই ম্যাচ থেকে পুরো পয়েন্ট তুলতে মরিয়া ছিল হাকিমির ছেলেরা। এদিন ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে মহমেডান যে ফুটবল আজ উপহার দিয়েছে তা এক কথায় অসাধারণ। যদি গোটা লিগ জুড়ে এর ছিটেফোঁটা পারফরম্যান্সও করতে পারতেন রভসন, সুরজরা তাহলে হয়তো এবারও খেতাব জয়ের লড়াই থাকতে পারতেন তাঁরা।
ম্যাচের শুরু থেকেই সাদা-কালো ব্রিগেডের ট্যাকটিক্যাল ফুটবলের কাছে দিশেহারা হয়ে পড়ে লিগ টেবিলের শীর্ষে থাকা ইস্টবেঙ্গল। মাঝমাঠের দখল নিয়ে, অ্যাটাকিং থার্ডে লোক বাড়িয়ে
দুই উইং বরাবর ক্রমাগত আক্রমণ করে যাওয়ার ফসল খুব তাড়াতাড়িই প্রথম গোল তুলে পেয়ে যায় মহমেডান। ম্যাচের বয়স তখন ২১ মিনিট। মহমেডানকে এগিয়ে দেন বামিয়া সামাদ। অবশ্য গোল খেয়ে কিছুটা ম্যাচে ফিরে আসার চেষ্টা করে ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু মহমেডান খেলোয়াড়দের নাছোড়বান্দা মনোভাবের কাছে বার বার হার মানতে হয় বিনোর ছেলেদের। অবশেষে বিরতির আগে গড়ে পাওয়া চদ্দো আনার মতো
জেসিনের গোলে সমতায় ফেরে ইস্টবেঙ্গল।
প্রথমার্ধের মতো দ্বিতীয়ার্ধেও ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্সের ওপর চাপ অব্যাহত রাখে সাদা-কালো ব্রিগেড। এবার প্রতি আক্রমণ থেকে রবসন গোল করে এগিয়ে দেন মহমেডানকে। তারপর আবার খেলায় ফেরার চেষ্টা করতে থাকে লাল হলুদ। আবারও বিনো জর্জের দলের কাছে পরিত্রাতা হয়ে ওঠেন জেসিন টিকে। গোল শোধের পর কাঙ্খিত গোলের লক্ষ্যে ঝাঁপাতে শুরু করে ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। ফলে ম্যাচ থেকে এক পয়েন্ট নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হল দুই প্রধানকে। ইস্টবেঙ্গল টেবিলের শীর্ষে থাকলেও খেতাব জয় করতে গেলে বাকি দুটি ম্যাচে জিততেই হবে তাঁদের।