সুদীপ্ত ভট্টাচার্য
কলকাতা ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪: শুক্রবার যুবভারতীতে আইএসএলের তৃতীয় ম্যাচেও ৩-২ গোলে এফসি গোয়ার কাছে হার মানল ইস্টবেঙ্গল। এফসি গোয়ার হয়ে এক স্প্যানিশ ফুটবলারের কাছেই কার্যত হার মানলেন কোয়াদ্রাত ব্রিগেড। তিনি হলেন বোরহা হেরেরা। লাল-হলুদের প্রাক্তনী যেন নিজের সেরা পারফরম্যান্সের জন্য এই ম্যাচটাকেই বেছে নিয়েছিলেন। চলতি আইএস-এলে প্রথম হ্যাটট্রিক এল তাঁর পা থেকেও। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর প্রাক্তন দলও আইএস-এলে হারের হ্যাটট্রিক করে ফেললো। অপর দিকে লাল-হলুদের হয়ে দুটি গোল করেন মাধি তালাল ও ডেডিড লালহাংসাঙ্গা।
এদিন ম্যাচে নিজের প্রথম একাদশে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছিলেন কুয়াদ্রাত। সউল ক্রেসপো ও দিয়ামান্তাকস অসুস্থতা ও চোটের কারণে না থাকায়, ডিফেন্সে আনোয়ারের সঙ্গে শুরু করেন হিজাজি। মিডফিল্ডার সৌভিককে নামিয়ে আনেন রাইট ব্যাকে। মাঝমাঠে তালাল, হেক্টর, নন্দ, মহেশ, জিকসন ও একমাত্র স্ট্রাইকার হিসেবে অভিজ্ঞ ক্লেটন। এবং গোলে প্রভুসুখনের বদলে অভিজ্ঞ দেবজিৎ।
খেলার শুরু থেকেই বল পজিশন নিয়ন্ত্রণে রেখে লাল হলুদ ডিফেন্সকে নিয়ে কার্যত ছেলেখেলা করতে থাকেন গোয়ার ফুটবলাররা। নেতৃত্বে সেই বোরহা। তাঁর পায়ে বল পড়লেই ত্রাহি ত্রাহি রব উঠতে থাকে ইস্টবেঙ্গল রক্ষণে। সেই আক্রমণের স্রোতে বার বার মাটি ধরেন কুয়াদ্রাতের আদরের হিজাজি মাহের। ম্যাচের শুরু থেকেই জর্ডন ডিফেন্ডারের শরীরী ভাষা যে বলে দিচ্ছিল অনেক কিছু। গোয়ার সেই আক্রমণের ঢেউ সামলাতে আনোয়ার যদি না থাকতেন তাহলে আরও বড় লজ্জার হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হত ইস্টবেঙ্গলকে। ভাগ্য সহায় থাকায় তা হয়নি।
মানালো মার্কুয়েজের দল প্রথম গোলের দেখা পায় ১৩ মিনিটের মাথায়। একটি পরিকল্পিত আক্রমণ থেকে গোয়ার হয়ে প্রথম গোলের খাতা খোলেন বোরহা। এর ৭ মিনিট পর আবারও স্কোরশিটে নাম তোলেন এই স্প্যানিশ মিডিও। এই গোলটির ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ দায়ী হিজাজি। একটা বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে তিনি বরিস সিংয়ের কাছে যেভাবে পরাস্ত হলেন তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাটাই স্বাভাবিক। হিজাজিকে পরাস্ত করে বরিসের মাইনাস থেকে ফের ব্যবধান বাড়ান বোরহা।
ইস্টবেঙ্গল প্রথম গোলের সন্ধান পায় ২৮ মিনিটে। মাধি তালাল স্পটকিক থেকে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে ব্যবধান কমান। দ্বিতীয়ার্ধের মহেশের বদলে বিষ্ণুকে নামিয়ে খেলায় ফিরতে চেয়েছিলেন কুয়াদ্রাত। কিন্তু গতি বাড়লেও কাজের কাজ হয়নি। উল্টে পর পর আক্রমণের তেজ বাড়িয়ে লাল-হলুদ ডিফেন্সকে আরও চাপে ফেলতে শুরু করে গোয়া। এ ক্ষেত্রে কপাল ভালো কুয়াদ্রাতের। সেই সুযোগ থেকে কখনও দেবজিৎ হয়ে ওঠেন সেভজিৎ, আবার কখনও বল যায় বাইরে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি সুযোগ হাতছাড়া করে ইস্টবেঙ্গলও। ৭০ মিনিটে লাল-হলুদের কফিনে ফের শেষ পেরেকটি পুঁতে দেন বোরহা। এই গোলের ক্ষেত্রেও দায়ী হিজাজি।
এরপর সায়ন, জেসিন, আমনদের নামিয়ে গোল পেতে মরিয়া হয়ে ওঠে ইস্টবেঙ্গল। ৮০ মিনিটে ম্যাকহিউ দুবার হলুদ কার্ড দেখে লাল কার্ড দেখে বাইরে যেতেই আক্রমণের তেজ বাড়ায় লাল-হলুদ। ৮৫ মিনিটে ৩০ গজ দূর থেকে নেওয়া আনোয়ারের দূরপাল্লার শট কাট্টিমনির হাত থেকে বেড়িয়ে গেলে তা থেকে গোল করে ব্যবধান কমান ডেডিভ। এরপর চেষ্টা করেও আর গোয়ার জালে বল জড়াতে পারেনি ইস্টবেঙ্গল। আর কবে তারা জয় পাবে তা স্বয়ং ঈশ্বর ছাড়া আর কেউ বলতে পারবে বলে মনে হয় না।