সুদীপ্ত ভট্টাচার্য
কলকাতা ১৩ সেপ্টেম্বর:কলকাতার ফুটবলে একটা কথা প্রচলিত আছে। চললে পাচু, না হলে পঞ্চানন। মোহবাগান কোচ হোসে মলিনার ক্ষেত্রে কি হবে সেটা সময় বলবে। তবে শুক্রবার আইএসএল -এর প্রথম ম্যাচে মুম্বই সিটি এফসির সঙ্গে প্রায় ৭০ মিনিট অবধি ২-০ গোলে এগিয়ে থাকার পরেও সেই ম্যাচ থেকে পুরো পয়েন্ট তুলতে ব্যর্থ হল সবুজ-মেরুন। নেপথ্যে অবশ্য দলের ভঙ্গুর রক্ষণভাগ। যার জেরেই ম্যাচ শেষ হল ২-২ গোলে।
শুক্রবারের ম্যাচ যেন ডুরান্ডের ফাইনাল ম্যাচের দ্বিতীয় অধ্যায়। সেই একই ভুল। আর তার খেসারত দিয়েই জয় হাতছাড়া। তাই ট্রফি জয় এবং এএফসি-তে ভালো ফলের কথা মাথায় রেখে এখন থেকেই ভালো ডিফেন্ডারের খোঁজ শুরু করা দরকার
বাগান কর্তাদের। না হলে শুধু এএফসি নয়, আইএসএল -ও ডুবতে হবে গঙ্গাপাড়ের ক্লাবটিকে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় যুবভারতীতে প্রথমার্ধের বেশ কয়েক মিনিট পিটার কার্টলের দল প্রাধান্য রেখে আক্রমণ শানাতে শুরু করার পরিকল্পনা বাগান রক্ষণে। মাঠে ম্যাচ দছখতে উপস্থিত প্রায় ৪২ হাজার দর্শক তখন সবে থিতু হয়ে বসতে চলেছেন, ঠিক সেই সময়ই বাগানের গোলে বল জড়িয়ে দেন মুম্বই উইঙ্গার বিপিন সিং। খেলার বয়স তখন মাত্র তিন মিনিট হয়েছে। কিন্তু রেফারি হরিশ কুণ্ডু অফসাইডের জন্য বাতিল না করলে হয়তো ম্যাচের ফল অন্যরকম হতেই পারত। এরপর তিরির আত্মঘাতী গোলে পিছিয়ে পড়ে মুম্বই। ২৮ মিনিটে বাগানের হয়ে ব্যবধান বাড়ান ডিফেন্ডার রডরিগেজ।
এরপর ম্যাচ যত এগিয়েছে বাগান রক্ষণের চাপ সৃষ্টি করে গোল শোধের মরিয়া চেষ্টা করতে থাকেন ছাংতে, বিপিনরা। দুই উইং দিয়ে আক্রমনের তেজ বাড়াতেই আশিস-শুভাসিদের করুণ দৃশ্য ফুটে উঠতে থাকে। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে মরিয়া হয়ে উঠতে মুম্বই ব্রিগেড। সারা ম্যাচে আহামরি ফুটবল না খেললেও বাগানের জালে দু দুবার বল জড়িয়ে জেতার স্বপ্ন দেখা বাগান কোচ মলিনাকে হতাশ করেই ছাড়লেন ছাংতে, বিপিন, তিরিরা।
এই ম্যাচে চার ডিফেন্ডার নিয়ে দল সাজিয়ে ছিলেন বাগান কোচ। রডরিগেজের সঙ্গে শুরু থেকেই ছিলেন দীপেন্দু। দুই পাশে শুভাশিস ও আশিস। মাঝমাঠে আপুইয়া, স্ট্রুয়ার্টের সঙ্গে অভিষেক। উপরে দিমি, কামিন্স ও লিস্টন। কামিন্সকে কিছুটা বেমানান দেখালেও লিস্টন ছিল বেশ সপ্রিতভ। যার ফলেই মুম্বই রক্ষণে চাপ সৃষ্টি করছিল মোহনবাগান। এবং তারই ফল মেনে হাতেনাতে।
কিন্তু দ্বিতিয়ার্ধের শুরূতে প্রথমার্ধের ছন্দ ধরে রাখলেও আস্তে আস্তে খেলা থেকে যেন কিছুটা হারিয়ে যেতে থাকে গতবারের লিগ-শিল্ড জয়ী ক্লাবটি। ডুরান্ড ফাইনালের মতো এই ম্যাচেও মলিনার বেশ কিছু খেলোয়াড় পরিবর্তষ মোহনবাগানকে পুরো পয়েন্ট পাওয়া থেকে বঞ্চিত করল। ভালো খেলা লিস্টনকে অহেতুক তুলে নেওয়া এবং রডরিগেজের চোট পেয়ে মাঠ ছাড়াই কাল হল মোহনবাগানের কাছে। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে খেলার রাশ নিজেদের হাতে নিয়ে নেয় মুম্বই। প্রথমে তিরি ও পরে ক্রোউমার গোলে হারা য্যাচ থেকে এক পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ল মুম্বই। সেই সঙ্গে সঙ্গে গতবারের আইএসএল -এর ফাইনাল ম্যাচে হারের বদলা অধরাই থেকে গেল বিশাল-শুভাশিসদের কাছে।
ম্যাচ শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বাগন কোচ খেলোয়াড়দের ঘাড়ে কোনও দোষ না দিয়ে নিজের ঘাড়েই নিলেন জেতা ম্যাচ হাতছাড়ার দায়। কিন্তু তা বলে তো আর আইএসএল -এর বৈতরণী পার হওয়া যাবে কি? তবে পরের ম্যাচে ভুল ত্রুটি শুধরে তাঁর দল মাঠে নামবে বলে আশ্বাস দেন বাগান কোচ। পাশাপাশি শোনা গেল বাঙালি ডিফেন্ডার দীপেন্দু বিশ্বাসের প্রশংসা। দীপেন্দু যে আগামী দিনে তাঁর তুরুপের তাস হতে চলেছেন তাও বুঝিয়ে দেন মলিনা। এখন দেখা যাক শেষ পর্যন্ত বাগানের দৌড় কোথায় শেষ হয় তা সময়ই বলবে।