এক চিলতে স্মৃতি

সুবল সরদার

আজকের নারীদের ক্ষমতা দখল দেখছি । তারা রাতের শহর দখল করছে। ভোর দখল করছে। তারা প্রতিবাদিনী হয়ে উঠেছে আরজি করের প্রতিবাদে । আমি তার ঢের আগে নারীদের ক্ষমতা দেখেছিলাম বিস্ময়িত হয়ে ডায়মন্ড হারবার ফকির চাঁদ কলেজে।১৯৮৫ -৮৬ সালে হবে। তখন ইলেভেন আটস। একদিন কলেজ গিয়ে দেখি আমাদের ক্লাসের বসার বেঞ্চে সব মেয়েদের দখলে। তারা আমাদের জায়গায় আগে থেকে বসে আছে। মনে হয় তারা আগে থেকে পরিকল্পনা করে রেখেছিল। আমরা ছেলেরা নিরুপায় হয়ে ওদের বসার বেঞ্চে গিয়ে বসলাম। ছেলেদের জায়গায় মেয়েরা আর মেয়েদের জায়গায় আমরা বেশে লাগছিল ! সুলেখাকে খুব আনন্দিত দেখছিলাম । শুনেছিলাম ওর মাথা থেকে এই ক্ষমতা দখলের পরিকল্পনা বের হয়েছিল। ক্লাসে স্যার এসে হতবাক। সুলেখা উঠে দাঁড়িয়ে বলল – স্যার আজ এই ভাবে ক্লাস হবে । স্যার ক্লাস নিতে শুরু করলেন। সেদিন স্যারেরও মনে মনে আনন্দ হয়েছিল বলে আমার মনে হয়েছিল।
নারীদের ক্ষমতা সেদিনও দেখেছিলাম আজকের দিনের মতো। সেদিনের সেই সাহসিনীরা কী আজকের প্রতিবাদিনী তারা? কৈশোরের সেই অতি পরিচিত মুখগুলো খুঁজি ট্রেনে ,বাসে,আজ বড় অস্পষ্ট,আবছা লাগে।
স্যালুট সুলেখা, কৃষ্ণা , সুমনাকে এবং আমাদের সেদিনের সহপাঠিনীগণকে। আজ এক চিলতে স্মৃতিতে সেই সব সাহসিনীদের কথা খুব করে মনে পড়ছে।

এক চিলতে স্মৃতি ২

দিদিগিরি দেখে ছিলাম সেই কলেজ লাইফে। ডায়মন্ড হারবার ফকির চাঁদ কলেজে। ১৯৮৬-৮৭ সাল হবে। তখন বি .এ সেকেন্ড ইয়ার। ইলা আমাদের সহপাঠী ছিল। একদিন তাকে জিজ্ঞেস করলাম- ইলা,তুই শিখাদিকে দেখেছিস। এমনভাবে খেঁকিয়ে উঠল আমি চমকে উঠলাম । মনে হয় সে জীবনে কখনো শিখার নামই শোনেননি।
দুই বোন ইলা অধিকারী আর শিখা অধিকারী। ইলা বড়ো ,শিখা ছোটো। স্কুলে কোন এক ক্লাসে ইলা ফেল করে শিখার পেছনে পড়ে গেছিল । মাধ্যমিক পাশ করে আমাদের সঙ্গে কলেজে ভর্তি হয়েছিল । আর শিখাদি ছিল আমাদের উপর ক্লাসে থার্ড ইয়ারে। দিদিকে দিদি না বলে বোনকে যদি দিদি বলি রাগ তো হবেই । দিদিগিরি বলে কথা! ইলাদি স্যালুট। ভালো থেকো। জানি তোর সঙ্গে কখনও দেখা হবে না। এক চিলতে স্মৃতিতে আজ তোর কথা খুব করে মনে পড়ছে ।

এক চিলতে স্মৃতি ৩

গ্ৰাম থেকে শহরে, স্কুল থেকে কলেজে আমার দেখা আমার কথা চমক -চমক ,মিষ্টি -মিষ্টি শব্দে, প্রেমে- রোম্যান্সে ,নাতিদীর্ঘ- জ্ঞানগর্ভাদী বর্জিত, ভয়ে -আড়ষ্ঠে বক্তৃতা শুরু করেছিলাম দু’চার কথা ইংরেজীতে A red letter day to us বলে । দারুণ রোমাঞ্চকর সে অনুভূতি! সেদিনটা ছিল নবীন বরণ উৎসব আমাদের ফকির চাঁদ কলেজের ‌‌। সময় ১৯৮৫ সাল হবে। সে অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী সঙ্গীত গেয়ে ছিল রুবি রায় ,আমাদের প্রথম বর্ষের কলা বিভাগের ছাত্রী-‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও আমার প্রাণে’,। আমি ছিলাম ভিড়ের মাঝে দুরু দুরু বুকে ভীরু চোখে ‌। প্রথম চোখ পড়ে তার চোখে। শিহরণ জাগে মনে। গানে গানে প্রাণে প্রাণে এখনও সে সুর বাজে গুনগুনিয়ে মনে মনে। সে কত দিনের কথা । দু একবার তার সঙ্গে দেখা হয়েছিল । বলেছিলাম বুকে আগুন জ্বলছে, নিভে কই ! শুধু হাসি বিনিময়। তারপর যে যার পথে। কত বছর ধরে তাকে খুঁজছি। যদি কখনো দেখা হয় ! তোর প্রেমিক জানে – আমি এখনও তোর খুঁজি ।
স্যালুট রুবি রায়। ভালো থাক । আজ এক চিলতে স্মৃতিতে খুব করে তোর কথা মনে পড়ছে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *