সুবল সরদার
আজকের সারাক্ষন ধরে বৃষ্টি পড়ছে। সেই বিকেল থেকে এখনো। থামার কোন লক্ষণ দেখিনা । আজ সারারাত নাকি চলবে -এই আগাম লাল সতর্কতা বার্তা জারি হয়েছে। অবিরাম ছন্দে পড়েই চলছে। শান্ত নির্বিবাদী হয়ে। মিষ্টি সুরেলা হয়ে পতনের ছন্দে সে ঝরেই চলেছে। ঝড়ের কোন দাপট নেই। কেবল মিষ্টি ঠান্ডার শিহরণ । কী মনোরম ! কী সুন্দর! কী অপূর্ব সৃষ্টি। ছোটো ছোটো বিন্দু কেমন করে মনের ঘরে সুর তোলে! এই ছোট ছোট বৃষ্টি বিন্দু কেমন করে সিন্ধু গড়ে! খোলা জানালার পাগলকরা অনুভূতি। আকাশ জুড়ে মেঘের বুক থেকে সে ঝরে চলেছে যেন কোন অভিমানীর সোনা ঝরা চাপা কান্না ।
ছোটো বেলায় বৃষ্টিতে খুব ভিজতাম। বৃষ্টির সঙ্গে পথে- ঘাটে ছোটাছুটি করতাম। দারুণ মজা পেতাম। এখন দরজা খুলে বৃষ্টি দেখি জমাট কালো মেঘের আকাশে। অপলক দৃষ্টিতে বৃষ্টি দেখি সুমিষ্ট ছন্দময় পতন । মনে হয় বেরিয়ে পড়ি। এক পশলা বৃষ্টিতে ভিজে আসি শ্রাবণ ধারায়। মনের যতো মলিনতা ,দুঃখ- কষ্ট সব ধুয়ে যাক, দূর হোক পৃথিবীর সব জঞ্জাল। শ্রাবণ ধারায় ভিজে নব জীবন ফিরে পাই । কিশোর হয়ে যাই। বৃষ্টি আমার প্রাণ, বৃষ্টি আমার গান, বৃষ্টি আমার ভালোবাসা। এ বৃষ্টির রাত শুধু আমার অবিরাম ধারাপাত । বৃষ্টির আজ ক্ষণেকের নেই বিরতি । কোন ক্লান্তি নেই, ক্লান্তি মুক্ত,শুধু মনাভিরাম নয়নাভিরাম অবিরাম মনোমুগ্ধকর। মনোমুগ্ধকর নয়নাভিরাম আমাদের কখনো ক্লান্তি লাগে ! মনে হয় বৃষ্টির ছোঁয়ায় পৃথিবী জেগে উঠেছে নতুন সুরে সবুজ পাতায় পাতায় ফুলে ফুলে বৃষ্টির সোহাগ ধারায় ধুয়ে । এতো বৃষ্টি, এতো শ্রাবণ ধারা আগে কে দেখেছে সারারাত সারাদিন , বৃষ্টির দেশে স্বপ্নের দ্বীপে বসে ! এতো বৃষ্টি! যদি পৃথিবীর বাকি স্থল সব জলময় হয়ে যায়!পৃথিবী নদী হয়ে যায় ! নোয়ার মতো আমি একটা নৌকা বানাবো। মেঘের দেশ থেকে রামধনু নিয়ে নদী পৃথিবীতে ফেরি করে বেড়াবো। নদী পৃথিবী হবে তখন আমাদের ঘরবাড়ি । তখন অরণ্য -পাহাড় -পশুপাখি? তারা ও থাকবে আমাদের সঙ্গে । পাহাড়- অরণ্য- নদী মিলে আমাদের নদী পৃথিবী । তখন নদী পৃথিবী থেকে খুঁজব কোথায় সবুজ দ্বীপের! তখন নীল পৃথিবী নয় ,তখন জল রঙের পৃথিবী । এতো যুদ্ধ ,এতো রক্ত? সব বন্ধ হবে । তখন কি শুধু জল যুদ্ধ হবে? সবই বন্ধ । পৃথিবী জুড়ে ঝগড়া -হিংসা- বিদ্বেষ সব জুড়িয়ে জল হয়ে যাবে। তখন একটাই যুদ্ধ জীবন যুদ্ধ যেমন করে নোয়া বেঁচে ছিল। তখন জল পৃথিবীতে জলের মতো সবই সহজ সরল হবে। তখন কঠিন কোন অঙ্ক থাকবে না। তাই বৃষ্টি মানে অনাসৃষ্টি নয়, শুধু সৃষ্টি।
তখন নদী পৃথিবী কেমন হবে? খুব সুন্দর হবে । এখন যেমন ক্লান্ত পাখি রাতের নীড়ে চোখ বুজে থাকে চুপে । ফুলের গান শোনে অলির সঙ্গে বাতাসে দুলে ।
দিন যদি রাত হয়,রাত যদি বৃষ্টি হয়,আমি সারাদিন সারারাত বৃষ্টির সঙ্গে টাপুর টুপুর। দিন যদি বৃষ্টি হয় বৃষ্টি যদি দিন হয় , আমি সারাদিন তার পথ চেয়ে থাকি -সারাদিন রিমঝিম ঝিমঝিম । বৃষ্টি যদি পথ আটকায় পালাই কেন ! পথ ভুল বৃষ্টির সঙ্গে থাকি টাপুর টুপুর সুরে। বৃষ্টিকে নিয়ে আমার যতো ভাবনা,সব ভাবনা তাকে দিয়ে গান ধরি -বর্ষণমুখর দিনে আমি শুধু একলা। বৃষ্টির স্বরলিপি চুরি করে লিখি বৃষ্টির দিনলিপি । ভাবি এতো মায়া ঢেলে কেন আসে পৃথিবী পরে ধেয়ে!
শ্রান্ত পৃথিবী কর্মহারা অলস হয় শ্রাবণ ধারায় ভিজে। আকাশ- বৃষ্টি -পৃথিবী সব এক হয়ে এক সুরে শ্রাবণ ধারায় মাতে সুরে ছন্দে মিলে। বৃষ্টি যদি নদীর বন্ধু হয়, ফুলের গান, অরণ্যের হাসি হয় ,বৃষ্টি আমার নদী সারাদিন আমি সাঁতার কাটব ভেসে ভেসে । তাই বৃষ্টি মানে শুধু আনন্দ , জলছবি আর স্বপ্ন । বৃষ্টি মানে কাব্য গাঁথা,মেঘ দূত, বিরহী যক্ষের বিয়োগ ব্যথা,বিরহিনীর কান্না – কত কথা পড়ে মনে জল তরঙ্গে ভেসে ।
জল তরঙ্গে নাচে মনে ।
তোমার সাথ আমি সারাদিন সারারাতে । বৃষ্টি সৃষ্টির আধার, সুন্দরের রূপ।
শ্রাবণ ধারায় আমি কর্মহারা
একলা ঘরে বসে জলছবি আঁকা ।
বৃষ্টি জলে মন ভেজা
দু’চোখ ভরে শুধু তোমায় খোঁজা।