প্রদীপ্ত চৌধুরী
আজ সকাল থেকেই মনটা অস্থির হয়ে ছিল মালিনী সেনের। বেলা গড়াতেই তাঁর জন্য বাড়ি থেকে রেঁধে নিয়ে এসেছেন ছোট বোন নন্দিনী। কিন্তু খাওয়ার কোনও রুচিই নেই মুখে। বোনের জোরাজুরিতে জোর করে কিছুটা খেলেন। তাও অনেক পরে। বিকেলের দিকে। কিন্তু তা সত্ত্বেও মনের মেঘ কাটেনি তাঁর।
আলো-মরা বিকেলটা সন্ধের দিকে একটু গড়াতেই মালিনী দেবী এবার চূড়ান্ত উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন ছেলেকে নিয়ে। কলেজ থেকে সে এখনও বাড়ি ফেরেনি! খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েছেন তিনি। ছেলের মোবাইলে ফোন করে চলেছেন সমানে। কিন্তু সেই ফোন একবারের জন্যেও লাগছে না। বোনকে বললেন, ‘তুই একটু দ্যাখ না নন্দিনী। ওর কলেজে যাবি একবার? দরকারে থানায় খবর দে। এত দেরি তো ওর হয় না।’ নন্দিনী অভয় দিলেন তাঁকে, ‘সে নয় আমি দেখছি দিদি। কিন্তু এত ব্যস্ত হওয়ার কিছু হয়নি। এমন কিছু দেরি হয়নি। শরীরটা তোর একদম ভালো নেই আজ। তুই বরং একটু ঘুমোনোর চেষ্টা কর। আমি দেখছি।’
গতকালই এ বাড়িতে ঠিকে কাজের জন্য ঢুকেছেন এক বয়স্ক মহিলা। তিনি মিনমিন করে বললেন, ‘আপনাদের একটু চা করে দেব মা?’ মালিনী দেবী বিশ্রীভাবে তাঁকে খেঁকিয়ে উঠলেন, ‘কিচ্ছুটি দরকার নেই আমার। তুমি শুধু তোমার কাজটা করো, তাহলেই আমি ধন্য।’ তাঁর উদ্বেগ আরও বাড়তে থাকল। চিৎকার-চেঁচামেচি করলেন আরও বেশ কিছুক্ষণ। তারপর হঠাৎই নেতিয়ে পড়লেন গভীর ঘুমে। নন্দিনী দেবী নিঃশব্দে বেরিয়ে এলেন ঘর থেকে।
এদিকে এইরকম ঘোরালো পরিস্থিতি দেখে খুবই হকচকিয়ে গেছেন ঠিকে কাজের মহিলাটি। নন্দিনী দেবীকে বেরিয়ে আসতে দেখে তিনি বললেন, ‘ছেলের কি একবার খোঁজ নেবেন মা? থানায় যদি যান তো বলবেন, সেখানে চেনাজানা একজন লোক আছে আমার।’
নন্দিনী তাঁকে বললেন, ‘না গো না, তার আর দরকার পড়বে না। ছেলে আমাদের কোনওদিনই আর ফিরবে না। সাত বছর আগে ঠিক এই দিনেই ভয়ঙ্কর ঘটনাটা ঘটেছিল। ও কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথেই বাইক অ্যাক্সিডেন্টটা হয়েছিল। তারপর থেকে প্রতি বছরই এই একই ঘটনা ঘটে চলেছে। চিন্তা নেই,খাবারে আমি ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছি। দিদি এখন অনেকক্ষণ নিঃসাড়ে ঘুমোবে।’