কলকাতা, মার্চ ১৪, ২০২৪: এক উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপে, অ্যাপোলো মাল্টিস্পেসালিটি হসপিটালস, কলকাতা, ফুসফুসের ইন্টারস্টিশিয়াল অসুখের (আইএলডি) চিকিৎসার জন্য, পূর্ব ভারতে প্রথম এক সর্বাঙ্গীন ক্লিনিকের সূচনা করল। এই ক্লিনিক সূচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় দ্য ওবেরয় গ্র্যান্ড-এ। সেখানে, আইএলডি’র বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই উদ্যোগের ওপর আলোকপাত করা হয়।
ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, অ্যাপোলো হসপিটালস গ্রুপের পূর্বাঞ্চলের সি.ই.ও. রাণা দাশগুপ্ত; অ্যাপোলো মাল্টিস্পেসালিটি হসপিটালস-এর চিকিৎসা পরিষেবার ডিরেক্টর ডাঃ সুরিন্দর সিং ভাটিয়া; রিউম্যাটলজিস্ট ডাঃ শ্যামাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়; ফুসফুস বিশেষজ্ঞ ডাঃ অশোক সেনগুপ্ত, ডাঃ সুভাশিষ ঘোষ, ডাঃ অরিন্দম মুখার্জি ও ডাঃ দেবোপম চ্যাটার্জি; ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ ডাঃ সুরেশ রামাসুব্বাম ও ডাঃ আসিফ ইকবাল; অ্যালার্জি ও প্রতিরোধ ব্যবস্থার বিশেষজ্ঞ ডাঃ শৈবাল মৈত্র; হার্ট, শ্বাসপ্রশ্বাসের ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ ও ইসিএমও চিকিৎসক ডাঃ অর্পণ চক্রবর্তী।
আইএলডি হল এক অস্বাভাবিক অসুখ যা ফুসফুস ফুলিয়ে দেয় ও সেখানে দাগ সৃষ্টি করে। ক্রমাগত কাশি ও শ্বাস-প্রশ্বাসের ক্রমবর্ধমান অসুবিধে, এই অসুখের খুব সাধারণ লক্ষণ। আইএলডি হাল্কা ধরনের হতে পারে। ধূমপান বন্ধ করার মতো সহজ উপায়ে অবস্থার উন্নতি হওয়া সম্ভব। আবার, এই অসুখ বেশ জটিল হতে পারে। সে ক্ষেত্রে, উপসর্গগুলি আরও প্রকট হয়ে যাওয়ার ফলে অবস্থার অবনতি ঘটতে পারে আরও।
ওই অনুষ্ঠানে, অ্যাপোলো হসপিটালস গ্রুপ-এর পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান কার্যনির্বাহী অফিসার মি. রাণা দাশগুপ্ত বলেন, “অ্যাপোলো হসপিটালস, কলকাতা, কেবল নতুন প্রযুক্তি প্রবর্তন করার মধ্যে দিয়ে আধুনিকতম চিকিৎসা নিশ্চিত করে তাই নয়, সঙ্কটজনক রোগীদের ক্ষেত্রে সর্বাঙ্গীন পরিষেবা দেওয়ার ব্যাপারে এই হাসপাতাল সবার থেকে অনেকটাই এগিয়ে আছে। অনেক সময়, আইএলডি রোগীদের ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ে ভুল হয়ে যায়। তাই এই রোগকে প্রতিরোধ করার জন্য চাই বাড়তি সচেতনতা। আইএলডি রোগীদের চিকিৎসা ও সঙ্কটাপন্ন কেসগুলির ব্যবন্থাপনায় এই ক্লিনিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।”
ফুসফুসের যে সব অংশের মাধ্যমে রক্তে অক্সিজেন আদান-প্রদান হয়, আইএলডি রোগীদের মধ্যে সেই অংশগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ফুসফুসে ক্ষতের ওপর দাগ পড়ে যায়। তার ফলে শ্বাস-প্রশ্বাসের অসুবিধে হয় ও দীর্ঘমেয়াদি ও কষ্টকর কাশি হতে থাকে। এই অবস্থার অবনতি হলে, একাধিক শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
ফুসফুস বিভাগের সিনিয়র চিকিৎসক ডাঃ অশোক সেনগুপ্ত বলেন, “একাধিক ধারা নিয়ে তৈরি এই ক্লিনিক আইএলডি রোগীদের উপশমের উপায় হয়ে উঠবে। কারণ, এখন থেকে আমরা তাঁদের কষ্ট কমাতে ও কিছু নির্দিষ্ট কেসে রোগীদের নতুন জীবন দিতে সক্ষম হব।” আইএলডি ব্যবস্থাপনা প্রকল্প এই ক্লিনিকের স্তম্ভ বলা যেতে পারে। উপসর্গ উপশম, অসুখের অবনতির গতি কমানো ও জীবনের সামগ্রিক মান উন্নয়ন হল এই প্রকল্পের লক্ষ্য। মাসে দু’ বার এই ক্লিনিক খোলা থাকবে এবং আইএলডি ব্যবস্থাপনায় দক্ষ এমনই সব ফুসফুস বিশেষজ্ঞ সেখানে উপস্থিত থাকবেন।
এই ক্লিনিকের বৈশিষ্ট্য হল এটি একটি ‘মাল্টিডিসিপ্লিনারি ডিসকাশন (এমডিডি) ক্লিনিকও বটে। তার মানে, এর সঙ্গে আছে একাধিক ধারার বিশেষজ্ঞদের একটি টিম। তার মধ্যে আছেন ফুসফুস ও ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ, রেডিওলজিস্ট, রিউম্যাটলজিস্ট, রিহ্যাবিলিটেশন বিশেষজ্ঞ, থোর্যাসিক সার্জেন ও দক্ষ নার্সদের একটি দল। একাধিক বিশেষজ্ঞের মধ্যে মত বিনিময়ের ফলে, রোগ নির্ণয় অনেক বেশি সামগ্রিক হয় এবং রোগীকে কী ভাবে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করা যায় সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়।
ফুসফুস বিভাগের সিনিয়র চিকিৎসক ডাঃ অরিন্দম মুখার্জি বলেন, “শ্বাস-প্রশ্বাসের ক্ষেত্রে সঠিক রোগ নির্ণয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইএলডি রোগীর অসুখ শনাক্ত করার ক্ষেত্রে ভুল হলে, রোগী সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হন। অ্যাপোলোয় আমাদের কর্মসূচি নিঁখুত রোগ নির্ণয় করতে বদ্ধপরিকর। সেই সঙ্গে প্রতিটি রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসা পরিকল্পনা করা হয়, যাতে প্রত্যেক রোগী প্রয়োজন ভিত্তিক চিকিৎসা পান। একাধিক বিশেষজ্ঞের মধ্যে আদান-প্রদানের মাধ্যমে ও অত্যাধুনিক পরিষেবার সাহায্যে আমরা ফুসফুসের চিকিৎসায় বিপ্লব আনার প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। আর তার মাধ্যমে যাঁরা ফুসফুসের ইন্টারস্টিশিয়াল অসুখে ভুগছেন, আমরা তাঁদের অসুখ সারিয়ে তুলতে ও আশার আলো দেথাতে সচেষ্ট।”
আইএলডি শনাক্ত করা ও তার চিকিৎসার পরিকল্পনা রচনা করার ব্যাপারে ভিন্ন ধারার বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণ, অসুখ নির্ণয়কে নির্ভুল করে ও সেই সঙ্গে তার যথার্থ ব্যবস্থাপনাও করা যায়। রোগীদের তাঁদের প্রয়োজন ভিত্তিক পরামর্শ দেওয়া হয় ও প্রতি তিন থেকে ছ’ মাস অন্তর রোগের অবস্থা যাচাই করার কথা বলা হয়।
রিউম্যাটলজি ও ইন্টার্নাল মেডিসিনের সিনিয়র চিকিৎসক ডাঃ শ্যামাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। উনি বলেন, “রোগীর নিরাময় আমাদের সব চেয়ে বেশি খুশি করে। আমাদের শক্তিও যোগায়। উচ্চমানের পরিষেবা সর্বত্র উপলব্ধ হওয়া উচিৎ।
ফুসফুসের জটিল অবস্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে, আইএলডি মাল্টিডিসিপ্লিনারি ক্লিনিক-এর স্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সর্বাধুনিক স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার ব্যাপারে অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালস, কলকাতা, সবর্দা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এবং রোগীদের সুস্থ করে তোলার যে দায়বদ্ধতা আমাদের রয়েছে, আইএলডি ক্লিনিক তারই সাক্ষ্য বহন করছে।