প্রদীপ্ত চৌধুরী
কত ব্যক্তিগত অনুষঙ্গই যে জড়িয়ে যায় গানের জন্মের সঙ্গে। কলকাতায় সেবার বইমেলার আসর বসেছে প্রথম। গীতিকার শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায় গেছেন সেই মেলায়। হঠাৎই দেখা হয়ে গেল কলেজ জীবনের এক পুরনো বান্ধবীর সঙ্গে। বান্ধবীটি তখন প্রায় চল্লিশের চৌকাঠে। সঙ্গে রয়েছে তাঁর অল্পবয়সি ছেলে। পুরনো বন্ধুকে হঠাৎ দেখতে পেয়ে তিনিও দারুণ খুশি। এরপর চা খেতে খেতে দু’জনেই মেতে গেলেন ফেলে আসা দিনের গল্পগাছায়। চমৎকার কেটে গেল অনেকটা সময়। সেদিন রাতেই গান লিখে ফেললেন শিবদাস। ‘ভালো করে তুমি চেয়ে দেখ / দেখ তো চিনতে পার কি না…’। ভূপেন হাজারিকার সুরে তুমুল জনপ্রিয় হয়েছিল লতার গাওয়া সেই গান।
নিছক ব্যক্তিগত ঘটনার প্রভাব গানের খাতায় উঠে আসায় তা সর্বজনীন হয়ে গেছে, এমন ঘটনা আরও বেশ কয়েকবার ঘটেছে। সুরকার (কিছু গানের গীতিকারও) অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় তখন গভীর প্রেমে জড়িয়ে পড়েছেন তাঁর এক ছাত্রীর সঙ্গে। একদিন বিকেলে কোনও নির্দিষ্ট জায়গায় তাঁদের দেখা করার কথা ছিল। কিন্তু যে কোনও কারণেই হোক, ছাত্রীটি সেদিন আসতে পারেননি। তখন তো আর মোবাইলের যুগ নয়। কেন তিনি আসেননি বা ইচ্ছে থাকলেও আসতে পারেননি, অভিজিৎবাবুর পক্ষে তা জানা সম্ভব হয়নি। কিন্তু এই অপ্রত্যাশিত ঘটনায় খুব হতাশ হয়ে পড়েন তিনি। সেদিনই রাতে সেই হতাশা প্রতিফলিত হয় তাঁর নিজের লেখা একটি গানে, যেটি গেয়েছিলেন সুবীর সেন। অতি পরিচিত এই গানটি হল ‘সারাদিন তোমায় ভেবে হল না আমার কোনও কাজ’। এই সম্পর্ক এবং তার টানাপোড়েন অভিজিৎবাবুকে দিয়ে আরও বেশ কিছু মনে রাখার মতো গান আদায় করে নিয়েছে। যেমন, ‘সবাই চলে গেছে’ বা ‘এমন একটা ঝড় উঠুক’ ইত্যাদি।