সেকেলে কলকাতা একালের চোখে

সুস্বাগত বন্দ্যোপাধ্যায়

পর্ব – আট

জব চার্ণক মোতিয়াকে বিয়ে করে নি।কিন্ত চার্ণক সাহেবের জীবনে তিনটি বছর মোতিয়া ছিল সিন্ধিয়ায় বেঁচে থাকার অক্সিজেন। মোতিয়ার জীবনে এই সময় অন্য কোন পুরুষ তাঁকে আদর
করতে সাহস পায় নি।বিয়ে না হলেও মোতিয়া জীবনকে বাজি রেখে প্রমান করেছিল, ভালোবাসা রোমান্সের রাসায়নিক বিক্রিয়ার ক্ষণিকের মজা
নয়,ভালোবাসা হৃদয়ের সমুদ্র মন্থনে বেদনার সফেন। বেদনার অন্তসলিলা অবগাহনে সিক্ত হওয়ার আনন্দ শুধু একাই উপভোগ করা যায়।সাহেব বুজুক বা নাবুজুক মোতিয়ার কিছু এসে যায় না।তাঁর ভালোবাসা ছাতিম ফুলের গন্ধ। ছাতিম গাছের ছায়ায় বসে এই বিদেশী বণিক শান্তির নিশ্বাস নিয়েছিল। একাকীত্বের যন্ত্রণা থেকে মুক্ত জীবনের আনন্দে সাহেবের কয়েক বছর বছর কেটে গেল।মোতিয়াকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সাহেব,নদীর ধারে মোতিয়ার জন্য মাটির একচালা বাড়ি তৈরী করে দিয়েছিল ।বিয়ে আর হোল কই? রাতের অন্ধকার,কালবৈশাখীর ঝড়,আর দপদপ করে জ্বলে ওঠা প্রদীপের আলো সাক্ষী মোতিয়ার শরীরে সাহেবের উষ্ণতার প্রসবণ। প্রদীপের আলো নিভে গেল,ঝড় থেমে গেল।রাতের মিঠি কথা দিনের আলোয় মিশে গেল,মোতিয়ার চোখের জল মুছল না।

কয়েকদিন পরের ঘটনা। সন্ধ্যে ঘনিয়ে রাত হয়েছে।আমাবস্যার অন্ধকার,আকাশে তারা,আর ঝোনাকির ঝিকিমিকি আলোয় চার্ণক বারান্দায় একা পায়চারি করছে।ছুটতে ছুটতে তাঁর জুনিয়র অফিসার টাউনসেন্ড খরর দিল,পাটনায় নদীর পাশের জঙ্গলে এক অল্প বয়সী বিধবা মহিলাকে তাঁর মৃত স্বামীর চিতায় সহমরণের জন্য ঢাক বাজিয়ে স্নান করাতে নিয়ে যাচ্ছে।খবরটা শোনামাত্র চার্ণক কোমরে রিভলভার গুজে নিয়ে ঘোড়ার পিঠে পেছনে জুনিয়র টাউনসেন্ডকে বসিয়ে ছুটল চিতার আগুন থেকে বিধবা তরুণীকে রক্ষা করতে।

বৃদ্ধ মৃত স্বামীর চিবুকের সামনে প্যাকাটির আগুন সবেমাত্র জ্বালানো হয়েছে।চিতার পায়ের সামনে আটারো বছরের যুবতী বিধবা।উজ্জ্বল শ্যামবর্ণা,নাক তাঁর টিকালো, চেরি ফলের মতো লাল ঠোঁট ।লাল বেনারসী পরে ঘোমটা টানা,কপাল অবধি সিদুঁর টানা,সোনার গয়নায় সালঙ্করা,নির্বাক, চোখের জল কাপড় ভিজছে,শ্বশুর বাড়ির আত্মীয় প্রতিবেশীরা মৃতর
শোক ভুলে আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়েছে।অনেক দিন পর এই গ্রামে ব্রাহ্মণ নারী সতী হবে।ভাগ্যবতী।

হঠাৎই বন্দুকের গুলির শব্দে পুরোহিতের মন্ত্র পাঠ,উচ্ছ্বাস সব থেমে গেল। যে যেখানে পারল চম্পট। শুধু চিতার আগুনে ভাগ্যবান সতী।টাউনসেন্ড , ‘তুমি শুন্য গুলি চালাও,আমি মেয়েটিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *