প্রদীপ্ত চৌধুরী
পর্ব – আট
আজ থেকে কম করেও প্রায় 30 বছর আগের কথা। কাঁকুলিয়া রোডে এক বন্ধুর বাড়ি তখন নিয়মিত যাতায়াত ছিল আমার।
সেই বাড়িরই তিনতলায় থাকতেন তখনকার বাংলা ছবির এক সুন্দরী এবং অতীব ফর্সা অভিনেত্রী। আটের দশকের একেবারে গোড়ায় একটি বাংলা ছবিতে প্রসেনজিতের বিপরীতে নায়িকা হিসেবে তাঁর অভিনয় জগতে পদার্পণ। নায়ক হিসেবে প্রসেনজিতেরও সেটাই ছিল প্রথম ছবি। সেই প্রথম ছবিতেই বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন ওই অভিনেত্রী। তারও প্রায় বছর দশেক আগে অবশ্য উত্তম-অপর্ণার সুপারহিট ছবি ‘জয়জয়ন্তী’-তে তিনি অভিনয় করেছিলেন একটি শিশু চরিত্রে। মহিলার সঙ্গে একদিন যেচেই আলাপ করলাম। বেশ হাসিখুশি, সপ্রতিভ মহিলা। বয়সে আমার চেয়ে কিছুটা বড়। দিদি বলেই কথা বলতাম। তারপর যাতায়াতের পথে দেখা হলে দু’দণ্ড দাঁড়িয়ে প্রায়ই ওঁর সঙ্গে কথা হত। মহিলা তখন শুধু সিনেমা নয়, থিয়েটারেও নেমেছেন। চোখে পড়ত, বাড়িতে ঘন ঘন আসা-যাওয়া করছেন অভিনয় জগতের বিখ্যাত কুশীলবরা।
এর কিছুদিন পর তাঁর বিয়ে হয়ে গেল। মহিলা তিনতলার সেই ফ্ল্যাট ছেড়ে চলে গেলেন অন্যত্র। কার সঙ্গে বিয়ে হল, বিয়ের পর কোথায় গেলেন, কিছুই জানতে পারলাম না। শুধু এটুকু শুনলাম, পাত্র অভিনয় দুনিয়ার মানুষ নন। কয়েক বছর বাদে শুনলাম, সেই বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর মহিলা আবার দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন।
এরপর কেটে গেল আরও অনেকগুলি বছর। একদিন একটা ফিল্ম ম্যাগাজিনের পাতা ওল্টাতে গিয়ে চোখে পড়ল অদ্ভুত একটা খবর। ‘বাংলা ছবির একদা নায়িকা এখন ভিক্ষা করে বেড়াচ্ছেন।’ লেখার সঙ্গে একটা ছবি। ছবিতে কোনওক্রমে তাঁকে চিনতে পারলাম। কাঁকুলিয়া রোডের সেই নায়িকা! জীর্ণ শীর্ণ বিবর্ণ বিশ্রী চেহারা। রাস্তায় বসে ভিক্ষা করছেন। সামনে একটা বাটি। লেখাটা বারবার ভালো করে পড়লাম। অজান্তেই চোখের কোণে জল চলে এল। নিয়তির কি বিচিত্র লীলা!
সেই লেখা ছেপে বেরোনোর পর অভিনেত্রী রূপা গাঙ্গুলি তাঁর দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। এরপর নিয়তি তাঁকে কোন পথে টেনে নিয়ে গেছে, তা আজও জানতে পারিনি।
সত্যিই জীবন বড় অনিশ্চিত আর বিচিত্র !