“তোমার অপেক্ষায়”

তনুশ্রী গুহ

আজ রাহুলের ইউনিভার্সিটি-র ক্লাসের শেষ দিন। ইউনিভার্সিটি থেকে ফেরার পর বাড়িতে বসে একটু ফেসবুক করছে রাহুল। চোখ পড়লো রাহুলের একটি মেয়ের প্রোফাইলে। যার নাম শ্রেয়া। রাহুলের খুব ভালো লাগলো সেই শ্রেয়া মেয়েটিকে দেখে। রাহুল ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালো শ্রেয়াকে। তারপর সারাক্ষণ রাহুল শুধু শ্রেয়ার কথাই ভাবতে লাগলো। রাহুল খুব ভালো গান করে। মনে মনে শ্রেয়াকে কল্পনা করে সে গান করতে লাগলো এবং ভাবতে লাগলো যাকে সে চেনেনা, জানেনা তার জন্য আজ তার মন এতো ছটফট করছে কেনো! কি আছে শ্রেয়ার মধ্যে! এভাবে ১ সপ্তাহ কেটে গেলো। রাহুল, শ্রেয়ার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট অ্যাক্সেপ্টের অপেক্ষায় রইলো।

২ সপ্তাহ পর শ্রেয়া, রাহুলের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট অ্যাক্সেপ্ট করলো। তারপর আস্তে আস্তে দুজনের মধ্যে কথাবার্তা শুরু হল। শ্রেয়া, রাহুলের মধ্যে এক ভালো সম্পর্ক শুরু হল। দুজন দুজনের খুব কেয়ার করা শুরু করলো। এখনো কেউ কাউকে সামনা সামনি দেখেনি। এরপর দুজন দুজনের সাথে দেখা করার দিন ঠিক করলো। এরপর দুজনের একদিন দেখা হল। রাহুল, শ্রেয়াকে দেখে যেনো চোখ সরাতে পারছিলোনা। এতোটা বেশি মন থেকে সে ভালোবেসেফেলেছিলো শ্রেয়াকে। রাহুল খুব সরল ও সাদাসিধা ছেলে তাই খুব সাদাসিধা ভাবেই সে শ্রেয়ার সাথে দেখা করতে আসে। আর ওদিকে শ্রেয়া সাজতে খুব ভালোবাসে, ওর কাছে বাইরের লুকস -ই যেনো সবকিছু। যাইহোক রাহুলকে সামনা সামনি দেখে এবং রাহুলের সাদাসিধা লুকস শ্রেয়ার ভালো লাগলোনা। কিন্তু সেটা সে রাহুলকে বুঝতে দিলোনা। দুজন দুজনের সাথে সেদিন দেখা করার পর রাহুল, শ্রেয়াকে বললো যে সে শ্রেয়াকে এখন আর শুধু বন্ধু মনে করেনা বরং তার জীবনসঙ্গী মনে করে। শ্রেয়া এটা শুনে একটা মুচকি হাসি দিলো। এরপর পরের দিন রাহুল, শ্রেয়াকে ফোন, এসএমএস করে কিন্তু শ্রেয়া, রাহুলকে ইগনোর করা শুরু করে।

তারপর রাহুল, কারণ জানতে চাওয়ায় শ্রেয়া, রাহুলকে বলে, “আমরা ভালো বন্ধু, এর বেশি আর কিছুনা। আমি খুব তাড়াতাড়ি কোনো স্টাইলিশ সুন্দর ছেলেকে বিয়ে করবো”। রাহুল, কারণটা বুঝতে পারে এবং রাহুল খুব কষ্ট পায়। তারপর শ্রেয়ার বিয়ে ঠিক হয় অন্য একজনের সাথে। রাহুল, শ্রেয়ার কাছে গিয়ে খুব কান্নাকাটি করে। শ্রেয়া তখন রাহুলকে বলে, ” তুমি যদি সত্যি আমাকে ভালোবাসো তাহলে আমার জীবন থেকে দূরে চলে যাও”। রাহুল খুব কষ্ট পায় এবং সেখান থেকে চলে যায়। এরপর শ্রেয়ার অন্যজনের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের ৬ মাসের মধ্যে শ্রেয়া জানতে পারে যে শ্রেয়ার বর একজন ঠকবাজ মানুষ এবং সে আগে বিয়ে করেছে, এবং যত দিন যায় সে শ্রেয়ার ওপর অত্যাচার শুরু করে। এই অত্যাচার গুলো সহ্য করতে আর পারছিলোনা শ্রেয়া। বাধ্য হয়ে সে তার বাবার বাড়িতে চলে যায় এবং সব বলে। কিন্তু তার বাড়ি থেকে তাকে বলে শ্বশুর বাড়িতে ফিরে যাওয়ার জন্য এবং অ্যাডজাস্টমেন্ট করার জন্য। দিন দিন শ্রেয়ার ওপর তার বরের অত্যাচার বাড়তে থাকে এবং শ্রেয়ার জীবন দুর্বিষহ হয়ে যায়। আর এদিকে রাহুল জীবন সংগ্রাম, কষ্ট করে আজ একজন প্রতিষ্ঠিত গায়ক। আর রাহুলে লুকস এখন আর চেনাই যায়না, মেয়ে ফ্যান ফলোয়িং ভর্তি এখন রাহুলের। কিন্তু রাহুল এখনো শ্রেয়াকেই ভালোবাসে। কারণ সে যে মন থেকে ভালোবেসেছিলো শ্রেয়াকে। অবশেষে শ্রেয়া আর এই অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে তার শ্বশুর বাড়ি ছেড়ে চলে গেলো।

কোথায় যাবে সে জানে না, কিন্তু আজ যেনো সে নিজের সেই ভুল বুঝতে পারছে যা সে রাহুলের সাথে করেছিলো। শ্রেয়া, রাহুলের কাছে গেলো। রাহুলের কাছে ক্ষমা চাইলো শ্রেয়া এবং বললো যে তার জীবনে এখন আর কিছু নেই, তাই সে আর কি করবে এখন কোনো আশ্রমে গিয়ে থাকবে। এই বলে শ্রেয়া যখন সেখান থেকে চলে যাচ্ছিলো তখন রাহুল, শ্রেয়ার হাত ধরে বললো, “শ্রেয়া, আমি আজও শুধু তোমাকেই ভালোবাসি। আমি থাকতে তুমি কোথাও যাবেনা। আমি জানিনা আমাদের সম্পর্কটা তোমার কাছে এখনো বন্ধুত্ব নাকি ভালোবাসা, কিন্তু আমার কাছে তুমি আমার সবকিছু”। এটি শুনে শ্রেয়া কেঁদে ফেললো এবং রাহুলকে জড়িয়ে ধরলো। এরপর শ্রেয়ার তার বরের সাথে ডিভোর্স হয়। আজ রাহুল আর শ্রেয়ার বিয়ে। রাহুলের সত্যিকারের ভালোবাসা ও অপেক্ষা অবশেষে জয়ী হল।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *