সুস্বাগত বন্দ্যোপাধ্যায়
পর্ব8
গন্ডকীর জলে মেঠে সিদুঁরের শেষ রেখা।নদীতে ডুব দিয়ে ওঠার সময় অশ্বথের কচি পাতার ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলোয় মোতিয়ার ভেজা এলোকেশ লাল হয়ে গেল। ঘাটে কেউ নেই। আছে অশুচি গন্ভকীর শুচি জলধারা, পুটুশ,কালকে কালকাশুন্দে,বরহর বনফুলের হাল্কা গন্ধ, নীল আকাশ, তলায় ভেজা কাপড়ে জরানো মোতিয়া হাত জোড় করা প্রার্থনা করছে। কচু পাতা জমে থাকা শিশির ভোরের আকাশে টুপটুপ করে যেমন মাটিতে পড়ে , তাঁর শ্যামাঙ্গী দেহ থেকে-ও টসটস করে পড়ছে জল।জলকেলির সময় হলে হয়ত রতিপতি তাঁর টোঁঠের চুমুকে রতি পিপাসা মেটাত।
রোদন বসন্তে হারিয়ে গিয়েছে মোতিয়ার
কাহিনী, গন্ধ মাখা দেহ, রতিপ্রিয়ার উচ্ছল চাউনি। এ বসন্ত উৎসব রংবাহার নয়।ফাগুয়ার আবির রঙে মনের বাহার। মাথার ওপর শিশু চাঁদের নির্লিপ্ত চোখ। সন্ধ্যে হবে একটু বাদে।একা হলেও
ভয় নেই। ঐ রেন্ডি খোর মর্দ্দানরা আসুক না।খিস্তি
ওদের ওষুধ। মোতিয়ার মনে কোন অবসাদ নেই,যন্ত্রণা নেই , পূর্বরাগ। আমের মুকুল আর ছাতিম ফুলের গন্ধে কার অভিসার?গন্ডকীর গল্প আর সাহেবের মুখ।
পৌরাণিক গল্পকথা গন্ডকী ছিল বেশ্যা। নারায়ণের কাছে আশীর্বাদ চেয়েছিল ,সে বেশ্যা হয়েই বেঁচে থাকবে।রক্ত গোলাপ ঠোঁটে কামখুরাকরা মধুরস পানে ছুটে আসবে । সৌন্দর্যের মেনকা হয়ে সারা জীবন কাটাতে চাই প্রভু। নারায়ণ বললেন,’ তথাস্তু। তুমি রতি পতির সেবা করো।’ গন্ডকীর সেবায় রসের নাগরা খুব খুশী।সারাদিন কামখুরাকদের ভির। গন্ডকী ক্লান্তিহীন। স্বয়ং নারায়ণ -ও গন্ডকীর ঘরে ছুঠেছে মৌতাত নিতে। খানাপিনার আতিথেয়তা ও
কামখেলায় প্রভু মুগ্ধ। ‘আদৌ কি গন্ডকী আমাকে
ভালোবাসে! ‘নারায়ণের মনে সন্দেহ হল।’পরীক্ষা
করতে হবে।’
নারায়ণ মারা গিয়েছে।দাহ করার জন্য শ্মশানে নিয়ে যাচ্ছে।গন্ডকী পাগলের মতো ছুটছে।নারায়ণের চিতাগ্নির পাশে গন্ডকী।সে জহর ব্রত নিয়েছে।নারায়ণের দেহের আগুনে সতী হবে।নারায়ণ গন্ডকীর প্রেমে তুষ্ট। চিতার আগুনে ধ্যানস্থ গন্ডকী।চিতার আগুন দাউ দউ করে জ্বলছে।কিন্ত তাঁর কাপড়ের একটি সুতোও পুড়ল না।বেশ্যার জীবন থেকে মুক্তি ,নদীর মতো মুক্ত জীবনের হিল্লোল।গঙ্গার বাম-ডান দুদিকে দিয়ে বহমান ধারায় সৃষ্টির জল সিঞ্চনের আনন্দে মুক্তি।যুগ যুগান্ত ধরে বেঁচে থাকার আনন্দের মুক্তি।নারায়ণের আশীর্বাদে গন্ডকী নদী গঙ্গার পাশ দিয়ে বিহারের শোনপুর দিয়ে উত্তরবাহিনী তিব্বত-নেপালে হিমালয়ের বরফগলা জলে গন্ডকী যোগিনী- জননী।তাঁর কোলে শুয়ে খেলা করছে নারায়ণ,শালগ্রাম শিলার কষ্টি পাথরে।
মোতিয়া মেনকা নয়, দিলওয়ালের দুলানিয়া হয়ে বাঁচার স্বপ্ন। সাহেবের দোলায় সে দুলবে, কার্তিক মাসে করবা চোখের নতুন কড়াতে নিমকিন ভেজে,মুকডালের লাড্ডু সাহেব কে খিলাইয়ে নির্জলা উপোস ভাঙবে।সে তো আউর ছয়মাস! পাটনায় পাঁচপীরের দরগায় বরং মুরগী মান্নত করি!যদি সাহেব আসে।’বন মুরগির মাংস খেলে সাহেব বহুত খুশ হবে।’