সুস্বাগত বন্দ্যোপাধ্যায়
পর্ব-6
হোলির বেল্লালাপনার খবর নবাবের কানে পৌঁছে দিয়েছে তাঁর চর-রা।’সম্রাট ঔরঙ্গজেবের রাজত্বে
হিন্দুদের হোলির রঙ কেলি -বনধ্ করো।নাচা-গানা আউর্ বাঈজী ঘরানা,রেন্ডিখানা’-,ইসলামের হারেম, তওবা-তওবা,কোরান-হাফিজে নিষিদ্ধ।
নবাবের ফরমান ,’ভেঙে গুরিয়ে দাও রেন্ডি-বাইজীদের হারেম।’
ঔরঙ্গজেবের ফতোয়ায় তাঁর সেনারা বাঈজী রেন্ডিদের ঘর ভাঙতে এলে মোতিয়া বাধা দেয়।সে জানতে চায়’ নবাবের দস্তখত কোথায়? ‘
‘হট্ যাও ,শ্যালে রেন্ডি, খতম কর দেগা ।’
গলির অন্যান্য মেয়েরা ছুঠে পালালেও মোতিয়া
রুখে দাঁড়ায়। সামনে হাতির পায়ের চাপে গলির কয়েক জন মেয়ের মৃত্যু, গলির কাঁচা মাটির ঘরগুলো ভেঙে মাঠ করে দিয়েছে।
মোতিয়া বুকে এক সেনা ঘোড়ার পিঠে বসে বন্দুকের নল ঠেকিয়ে আছে আর এক সেনা মাটিতে ফেলে লাটি পেটা করছে।রেন্ডিগলির দালালরা সেনার ঘোড়ার খুরের শব্দ শুনেই পগার পাড়।মোতিয়া তাঁর জমি থেকে
ভয়ে সরে যায় নি।রেন্ডির-ও প্রতিবাদের অধিকার আছে।

হঠাৎই এই পথ দিয়ে শিউচরণকে শওয়ারি করে চার্ণক ঘোড়ায় চড়ে যাচ্ছিল। কানের কাছে বাঁচানোর আর্তনাদ শুনতে পেলো।শিউচরণ কে জিজ্ঞেস করল,’ এ গলার আওয়াজ মোতিয়ার না’!
ইংরেজ সাহেবের হুংকারে মোঘল সেনা তথমথ খেয়ে যায়।মাটিতে তাঁর কাপড় লুঠচ্ছে।ঠোঁটের কোন দিয়ে রক্ত ঝরছে, বেধড়ক মারে হাতে রক্ত জমাট বেঁধেছে। সাহেবের পা ধরে তাঁর পাথর ভাঙা কান্না। ‘আমায় একটু জায়গা দাও, ‘
‘তোমার আশ্রিতা হয়ে বেঁচে থাকব,তুমি আমায় রক্ষা করো’।
এ কোন দুপুর, মাথার ওপর সূর্যের আলোতেও মোতিয়ার কাছে রাতের চেয়েও অন্ধকার সময়। সাহেবের সামনে নতজানু হয়ে তাঁর দুটি পা ধরে মাথা কুটে কান্নায় সাহেবের চাবুকমারা চোখ হারিয়ে গেল মোতিয়ার অন্তস্থলের কান্নায়।তাঁর দুবাহু ধরে তুলে চার্ণক ঘোড়ার হাওদার সামনে তাকে বসিয়ে সোজা দৌড় পাটনার গঙ্গা-শোননদীর মিলন ঘাটে।সাহেবের কুঠীরের মাঠ ,জঙ্গল পেরিয়ে প্রশস্ত গঙ্গা।নদীর আশেপাশে পিটুলি, বুনো বাবলা কাঁটার জঙ্গল। ঘাটে সূর্যের আলোয় নদী চরের বালিরাশি চকচক করছে।
দুপুরে সবাই চান করে গিয়েছে। মোতিয়া -,চার্ণক ছাড়া অন্য কেউ এই ঘাটে নেই। সাহেবের চোখের সাথে তাঁর চোখের দৃষ্টি মিলন।ছেঁড়া,রঙ চটা কাপড়ে ঢাকা মতিয়ার শরীরে রোদ-ছায়ার হাল্কা আলো এসে পড়েছে।চোখে মুখে সব কিছু হারানো
উদ্বাস্তু হয়ে ওঠা অস্তিত্ব রক্ষার যন্ত্রণা, অন্ধকারের ঘোমটা টানা নারীর মুখে সাহেব খুঁজে পেয়েছে প্রশান্তির সুন্দরী কে। বুনো এড়াঞ্চি ফুলের গন্ধ আর শালের ডালে কোকিলের শিসে যেন বাজে রাগ বসন্ত বাহার। মোতিয়ার ডান হাতের তালু চার্ণকের বুকের কাছে …।