নানা রঙের দিনগুলি

প্রদীপ্ত চৌধুরী

পর্ব চার

বহু খ্যাতিমান শিল্পীর সাক্ষাৎকার নিয়েছি সাংবাদিক জীবনে। তাঁদের মুখোমুখি বসে কথা বলার সময় যে কী শিহরণ অনুভব করতাম, তা বলে বোঝাতে পারব না।অনেক বছর আগে একবার গল্ফগ্রিনে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি গিয়েছিলাম তাঁর ইন্টারভিউ নিতে। তাঁর বাইরের ঘরে বসে ঘণ্টা দুয়েক কথা বলেছিলাম। কথা বলে যা বুঝেছিলাম, এত শিক্ষিত (প্রকৃত অর্থে), মার্জিত, গভীর শিল্পবোধ সম্পন্ন মানুষ টলিউডে তো বটেই, বাঙালিদের মধ্যেও এখন প্রায় বিরল। কথা বলে যাচ্ছিলেন অনর্গল। কিন্তু মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছিলাম তাঁর কণ্ঠস্বর, শব্দচয়ন আর বাকভঙ্গিমায়।

শুধু তাই নয়, এত বড় ডাকসাইটে শিল্পী, অথচ কথনে একবারও ফুটে উঠল না আমিত্ব। দরজার বাইরে নেমপ্লেটে তাঁর নাম নেই। যে ঘরটায় বসেছিলাম, সেটারও কোনও দেওয়ালে তাঁর একটা ছবি দেখতে পেলাম না। অবাক লাগছিল, নামী-দামি যে কোনও শিল্পীর পক্ষেই কি এতটা নির্মোহ হওয়া সম্ভব? মাঝে একবার জল খেতে চেয়েছিলাম। স্ত্রী বাড়িতে ছিলেন। হয়তো আরও কেউ ছিলেন। সৌমিত্রবাবু কিন্তু কাউকেই কিছু বললেন না। উঠে গিয়ে ভেতর থেকে একটা প্লেটের ওপর জলভরা গ্লাসটা নিজেই হাতে করে নিয়ে এলেন।

সেদিনের ওই দুটো ঘণ্টার প্রাপ্তি আমার মতো অর্বাচীনের জীবনে এক অমূল্য সম্পদ। এত রূপ, গুণ, খ্যাতি, বৈভব থাকা সত্ত্বেও পা-টাকে যে মাটিতে রাখা যায়, সেদিন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গলাভ না হলে সেটা বোধহয় আমার আর জানা হত না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *