প্রদীপ্ত চৌধুরী
পর্ব দুই
আমার বস ছিলেন সতীনাথ চট্টোপাধ্যায়। এখনকার নামী অভিনেতা পরমব্রতর বাবা। একটু আত্মভোলা এবং গুণী মানুষ। এসরাজ বাজাতে জানতেন। একদিন আমায় assignment দিলেন, হোটেল হিন্দুস্থানে গিয়ে ‘মিস ক্যালকাটা’ কভার করতে হবে।পুলক আর আমার ধরে না। সময়মতো চলে গেলাম যথাস্থানে।
চোখ বড় বড় করে দেখলাম, হোটেলের বিশাল লনে বসেছে বর্ণাঢ্য আসর। মঞ্চে চলেছে স্বল্পবাস উর্বশী-অপ্সরাদের নন্দিত ক্যাটওয়াক। লনের অন্য প্রান্তে খানাপিনার ঢালাও আয়োজন। মনে হল, এ পৃথিবীর কোথাও এককণা দুঃখ নেই। অনুষ্ঠান যখন একেবারে শেষের দিকে, তখন হঠাৎই দেখি, সামনে দাঁড়িয়ে সতীনাথদা! হাতে গ্লাস। গ্লাসের একেবারে তলানিতে হুইস্কি। গোঁফের তলায় মুচকি হেসে একটু জড়ানো গলায় আমায় বললেন, ‘খাচ্ছ খাও, কিন্তু যে ফার্স্ট হবে, তার ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস-টা আমার চাই।’ অবাক হয়ে গেলাম। সতীনাথদা কখনোই এ ধরনের কথাবার্তা বলেন না। বুঝলাম, মানুষটা খুব স্বাভাবিক অবস্থায় নেই।আমতা আমতা করে বললাম, ‘আমি কী করে জানব সতীনাথদা?’ বললেন, ‘কী করে জানবে সেটা তোমার ব্যাপার, কিন্তু তোমার লেখায় এই তথ্যটা আমার চাই।’
ঝামেলার একশেষ। এতক্ষণ বেশ আনন্দেই কাটছিল সময়টা। আমার কপালটাই খারাপ। সুখপাখি চট করতেই উড়ে পালায়। একটু পরেই শেষ হল অনুষ্ঠান। ঘোষিত হল প্রথম স্থানাধিকারিনীর নাম। দেখলাম, গায়ের রং ঈষৎ কালো হলেও ‘মিস ক্যালকাটা’র চেহারা কিন্তু সবিশেষ আকর্ষণীয়। কিন্তু তাঁর অনিন্দ্যসুন্দর দেহের মাপজোক আমি জানব কী করে? তাছাড়া ফটোগ্রাফারদের ভিড়ে তিনি তো ক্রমশ অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছেন। টেনশনে আমি তখন ঘামতে শুরু করেছি। মাথা কাজ করছে না। কাল বিকেলের মধ্যে লেখাটা জমা দিতে হবে।
ঠিক এই সময় হঠাৎই চোখ গিয়ে পড়ল পঞ্চাদার ওপর। পঞ্চাদা (শ্রীপঞ্চানন) বাংলা সিনেমার বিখ্যাত পিআরও (প্রচার সচিব)। ছবি বিশ্বাস থেকে উত্তমকুমার, সবার ‘জিগরি দোস্ত’ ছিলেন। আজকের অনুষ্ঠানেরও পিআরও তিনিই । কেন জানি না, আমায় খুব ভালোবাসতেন। সমস্যাটা পঞ্চাদাকে খুলে বললাম। পঞ্চাদা বললেন, ‘শোন, তুই একটা কাজ কর। একটু রাতের দিকে তুই আমায় ফোন কর। আমি তোকে মেয়েটার ফোন নাম্বার দেব। আমার নাম করে যা জিজ্ঞেস করার করবি, কোনও সমস্যা হবে না।’
রাতে পঞ্চাদা নম্বরটা দিলেন। রাত তখন প্রায় বারোটা। আমি ভয়ে ভয়ে ডায়াল করলাম সেই নম্বরে। সদ্য ‘মিস ক্যালকাটা’ই ফোনটা ধরলেন। একথা-সেকথার পর অনেক কষ্টে লজ্জার মাথা খেয়ে কাগজের দোহাই দিয়ে জানতে চাইলাম তাঁর ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস। তরুণী কিন্তু এতটুকু অপ্রস্তুত হলেন না। একটু হেসে উঠে অবলীলায় বলে উঠলেন, ‘লিখে নিন…34-24-36।’ ধন্যবাদ আর শুভরাত্রি জানিয়ে ফোনটা রেখে দিলাম। আরেকটা ফোন করে পঞ্চাদাকেও জানালাম কৃতজ্ঞতা।
পরের দিন বেশ বড় করে কাগজে বেরোল সেই লেখা। বেশ বড় পয়েন্টেই হেডিং করেছেন সতীনাথদা। ‘কলকাতার সুন্দরী শ্রেষ্ঠা বিপাশা বসু।