সুস্বাগত বন্দ্যোপাধ্যায়
পর্ব-১
ইতিহাসের গতিপথ সময়ের নিয়মে বাধা।কালের ধারায় অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যত চলেছে। মাঝে মাঝে পেছনে তাকাতে ভাল লাগে। যেসময় জন্ম হয় নি, সেই সময় আমার চারপাশের জগতটা কেমন ছিল! আবেগ-বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখি পুরাতন স্মৃতির টিকে থাকা ভাঙা ,আদলা ইট ,কাঠ, পাথরের নির্বাক পুরাতত্ত্ব। যে রাস্তা দিয়ে গাড়ির মিছিল চলেছে ,আজ থেকে তিনশো বছর আগে ছিল সেই রাস্তা ছিল জলা -জঙ্গল।এক সময় নাকি ব্রিগেডের মাঠে সুন্দরবন থেকে বাঘেরা এখানে ঘুরতে আসত।
ব্রিগেড থেকে বরাহনগর দীর্ঘ পনেরো কিমি পথ দখল করতে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর কালঘাম ছুঠে গিয়েছিল।কলকাতার আশেপাশের গ্রামের জমিদাররা লালমুখো সাহেবদের কাছে কিছুতেই জমির স্বত্ত্ব ছাড়তে রাজী নয়।জমি না পেলে খাওয়া ,থাকা ,ব্যাবসা বাণিজ্যের কাজ কিভাবে হবে? সাহেবদের থাকার জন্য white Town কোথায় গড়ে উঠবে?লন্ডন উপনিবেশেের আধুনিক কলকাতার প্রমোদ উদ্যান গড়ে নেটিভদের তাক লাগাবে কী করে? হ্যাট, গড্ বলা যো হুজুর না হলে তো ভারতে তাদের আর বেশীদিন নেই।তারা সাহেব ব্যাবসায়ী,সুলুক সন্ধানী।জলের মাছ তেলে ভাজতে জানে। শুধু একটু সময়।
দিল্লির সম্রাট ফারুকশিয়ারের অসুখ। দেশী হাকিম,বদ্দিরা , রোগ সারাতে ব্যর্থ। সম্রাটের মলদ্বার দিয়ে রক্ত বেরিয়ে ই চলেছে।পরিবার মন্ত্রী আমলা , পরিষদ সবাই বিড়ম্বনার মধ্যে আছে।১৭১৫র অগষ্ট মাস।বর্ষার জলে কলকাতার কাদা প্যাচপ্যাচে অবস্হা।সাহেবরা কিভাবে থাকবে।দিল্লিতে গিয়ে সম্রাটের কাছে জমির ফরমান নিতেই হবে।কিন্ত অসুস্থ সম্রাট কি দেখা করবে!
রাজদর্শনে কোম্পানীর সাহেবদের সাথে ছিল ইংরেজ ডাক্তার সার্জেন্ট হ্যমিলন্টন। এই সুযোগ কাজে লাগাতেই হবে।
মোঘল সম্রাট ফারুকশিয়ারের সম্ভবত অর্শ রোগ হয়েছিল।সার্জেন ডাক্তার হ্যমিলন্টন সাহেব ছুরি-কাঁচি চালিয়ে সম্রাটের ফিসচুলা বা ভগন্দর রোগ সারাল। সম্রাট খুশি হয়ে সাহেবকে জিজ্ঞেস করলেন ,’কি চাই আপনার?’কোম্পানির কুশীলবরা হ্যমিলন্টন ডাক্তারকে আগে থেকে বলেই রেখেছিল, গঙ্গার পুব-পশ্চিমের বিস্তীর্ণ সমভূমির ওপর কোম্পানীর দখলদারী চাও। এই অঞ্চলের জমিদাররা কিছুতেই জায়গাগুলো কোম্পানীকে বিক্রি করতে চাইছে না।যেমন কথা তেমনি কাজ।ফারুকশিয়ারের নির্দেশ দিল জমিদারদের গঙ্গার পশ্চিম দিকের
পাঁচটি গ্রাম ফোর্ট শালিখা,ফোর্ট বেতর, হারোরা,
কাসুন্দে,রামকেষ্টপুর, এবং পুবের দক্ষিণ পাইকপাড়া, হোগলকূড়িয়া,শিমলা ,দক্ষিন দাঁড়ি,বেলগাছিয়া, ইত্যাদি সহ পয়ত্রিশটি গ্রাম কোম্পানীকে দিয়ে দেবার।জমিদারদের কিছু করার নেই আগেই ১৬৯৮ সালে ১৬০০০টাকায় ডিহি কলকাতা|র১৭০৪ বিঘা,সুতানুটির১০৪৪ বিঘা,গোবিন্দপুরের১৩.৫ বিঘা,এবংহুগলী নদীর এলাকা বরাবর সাবর্ণ চৌধুরী কাছ থেকে কিনেছিল।তার সাথে চল্লিশটি গ্রাম। কোম্পানীর কলকাতায় জমির ওপর নিজেদের মালিকানা
কায়েম করতে এক ধাপ এগোলো।