সুস্বাগত বন্দ্যোপাধ্যায়
পর্ব-2
ইংল্যান্ড থেকে কলকাতা।সমুদ্র পথে ৮৭০৭মাইল।২২টি ইংলিশ চ্যানেল, ভূমধ্যসাগর,ভারত মহাসাগর, আরবসাগর ধরে নদী ,খাল ,সমুদ্র পেরিয়ে বঙ্গোপসাগরের ধারে বাংলাদেশের উর্বর সম্পদ লুঠ করে ফিরে এলে চলবে না।ইংরেজর চোদ্দ পুরুষের জিন যেন ভর করে থাকে বাঙালীর ওপর। বার্ষিক ৪০ পাউন্ডের সেকেন্ড ইন চার্জকে দিয়ে আর চলছে না।একদিকে মোঘল শাসক,,ফরমানদের নিত্য করের জুমলাবাজি অন্যদিকে, ফরেদের উপপাৎ-এ কোম্পানীর ব্যাবসা তো লাটে ওটার জোগার।নেটিভদের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা ধার নিতে হচ্ছে।তারপর কোম্পানীর মালে আগুন লাগানোর ঘটনা কাশিমবাজার, হুগলি,মুকসুদাবাদ,পাটনায় আমেশাই ঘটছে। কোম্পানীর গনেশ না উল্টে যায়।কোর্ট অব ডাইরেক্টরের নির্দেশ ,কাপ্টেন হ্যাট -সেকেন্ড ইন কমান্ডার দায়িত্ব নিয়ে বঙ্গোপসাগর পাড়ি দাও। হাতে সময় নেই।
সাড়ে ছয় ফুট লম্বা, চোখ দুটি পচা ভাদ্রে দুপুর সূর্যের রোদে জ্বলছে.মাথায় সোনালী হুইগ ,ছয় মাস জলে কাটিয়ে গলার আওয়াজে সমুদ্র ডেউ-র গর্জন।হান্টের জাহাজ কলকাতায় পৌঁছল ২৫শেংসেপ্টেম্বর১৬৮৮ ,দুপুরে।কালীঘাটের মা কালীর প্রসাদী ফুল তাঁর স্ত্রী ইলা- -চার্ণকের আদরের এঞ্জেলা স্বামীর মাথায় ঠেকিয়েছে।হঠাৎই সুতানুটির ঘাট থেকে চিৎকারে এঞ্জেলার হাত কেঁপে উঠল। বাইরে বেরিয়ে এসে দেখে ঘাটে জাহাজ ভিরেছে।কাপ্টেন সহ জনা ৭০ সেনা আছে।বুকে বল পেল চার্ণক। সেনা চেয়ে একবছর আগে কোম্পানীর কাছে দরখাস্ত লিখেছে।নবাব ফৌজ আক্রমণের আতঙ্কে কত রাত এঞ্জেলার মুখের দিকে তাকাতে পারিনি।
গডেস কালী ওর কথা শুনেছে।
হান্ট -‘সুতানুটির দূর্গ কোথায়?’
চার্ণক-মোঘলদের নিষেধে সুতানুটিতে দূর্গ নির্মাণ করা যায় নি।
বেজায় চটে বাজখাই গলায় হান্ট বলল,’তাহলে তুমি কেন এই সুতানুটি বাজার পছন্দ করলে।’
চার্ণক:আমি ব্যাবসায়ী, জায়গার দাম বুঝি। তোমার কাছে যুদ্ধ বড় হতে পারে ,আমার কাছে নয়।একটু বিশ্রাম নাও। শান্ত হও।
হান্ট:সেনার কাজ শান্ত থাকা নয়।যুদ্ধ জয়। আগ্রাসন।রাজ্য জয় রাজার হয়।সেনা থাকে
মৃত্যুর প্রতীক্ষায়।থাক এসব আবেগের কথা।
সুতানুটি ছেড়ে চট্টগ্রাম তোমাকে নভেম্বর মাসের মধ্যে পৌঁছতে হবে। হ্যাঁ,আরাকানের রাজার সাথে
সমঝোতা করো,নাহলে যুদ্ধ করো।
জাহাজের কেবিন থেকে বেরিয়ে যখন এলো তখন সন্ধ্যা হয় নি। একটূ আগে বৃষ্টির পর আকাশে পেঁজা কাশ ফুলের মেঘের বুকে শতদল লাল পদ্মের পাপড়ি মেলে শরতের অধিবাস হয়েছে।আটাশ বছর আগে পিতৃভুমি ইংল্যান্ডের ছেড়ে এসেছি।বাবা -মা-কেউ বেঁচে নেই।আমার ইশ্বর খ্রীষ্ট।পাটনার মতিয়ার পাঁচপীরের দরগায় বলি, লালবাগের জঙ্গলে বনফুলের মালায় আমার এঞ্জেলার মানত জোড়া প্যাঁঠাবলি খ্রীষ্টানের চোখে কুসংস্কার পৌত্তলিকতার ব্যাভিচার, কিন্ত ভালোবাসার জন্য নিজেকে উজার করে কোন মেম পারে নি। মোতিয়া-এঞ্জেলার ধর্মই আমার ধর্ম। এ মাটি আমার মাটি।রাতের অন্ধকার সুতানুটির জঙ্গলে মিশে যায়।তারার আলোয় পথ চলা চার্ণকের হতাশা -আবার সুতানুটি ছেড়ে চলে যেতে হবে।কী হবে এঞ্জেলার মাটির কুঠী,পুকুর, পাখি, আর কালী মন্দির।স্বপ্ন ই থাকবে!
জঙ্গলে শেয়ালের ডাক-আর বাঁশ পাতার শব্দে জব চার্ণক অতীত ভবিষ্যত সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।