সাহস ও স্কিলের মেলবন্ধনই ছিল হাবিবের মূলমন্ত্র

জয় ভট্টাচার্য

ও পেলে হ্যায় তো কেয়া হ্যায়। হাম হাবিব হ্যায়।  হাম কিসেসে কম নেহি।  ১৯৭৭-এ এইরকম সাহসের উক্তি মোহনবাগান খেলোয়াড়দের সামনে করে মোটিভেড করেছিলেন মহম্মদ হাবিব। যে কথা আজও কান পাতলেই শোনা যায় গোটা ময়দানজড়ে। যিনি গত ১৫ আগস্ট পাড়ি দিলেন চির ঘুমের দেশে।  ময়দান হারালো বড় মিঞাকে।

মহম্মদ হাবিবকে নিয়ে বলতে গেলে অনেক কিছু বলতে হয়। আসলে হাবিব নিজেই ছিলেন একজন মহীরুহ। ভারতবর্ষের মাটিতে প্রথম প্রফেশনাল ফুটবলার ছিলেন তিনি। কঠোর নিয়মানুবর্তিতা, আর  কঠোর অনুশীলন একজন ফুটবলারের এর বাইরে কোনও কিছু হতে পারে না বলেই বিশ্বাস ছিল তাঁর।

 ছয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়। প্রয়াত ইস্টবেঙ্গল কর্তা জ্যোতিষ গুহ দলে নিয়েছিলেন  মহম্মদ হাবিবকে। তারপর একে একে খেলেছেন কলকাতার তিন প্রধানেই। যা এক অনন্য নজির। কত ট্রফি জয় করেছেন তিন প্রধানের জার্সি গায়েই।

হায়দারাবাদে জন্ম হলেও কলকাতা ছিল তাঁর দ্বিতীয় জন্মস্থান। যখনই কলকাতা থেকে ডাক পেয়েছেন ছুটে এসেছেন শহরে। অবাক হয়ে দেখেছেন, তাঁর প্রিয় তিন প্রধানকে। স্মৃতি খুঁজে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন তাঁর সোনালি দিনগুলিতে। এই তো সেই ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, মহমেডান মাঠ। লিগের সময় এই রাস্তা দিয়েই ম্যাচে শেষে বাড়ি ফিরতে পারতাম না সমর্থকদের আনন্দের জেরে।

ধীরে ধীরে সবাইকেই বিদায় জানতে ফুটবলকে। হাবিবের ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। তবে প্রফেশনাল ফুটবলকে বিদায় দিলেও ফুটবলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেননি মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত।

সুভাষ, সুরজিৎ, সুকল্যান, চিন্ময়, শিবাজীরা পাড়ি দিয়েছেন আগেই। চলে গিয়েছেন তাঁর প্রিয় দুই কোচ অমল দত্ত ও প্রদীপ ব্যানার্জীও। এবার হাবিব। অর্থ্যাৎ, সাতের দশকের এক এক নক্ষত্রের মৃত্যুতে যেন শেষ হচ্ছে এক একটা অধ্যায়।হাবিব দার প্রয়াণের পর এক প্রাক্তন ফুটবলারের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা হচ্ছিল হাবিব দা কে নিয়ে। তাঁর কাছ থেকেই শুনলাম মাঠে হাবিবদা কিছুতেই হারতে চাইতেন না। এমনকি ছোটো দলের সঙ্গে খেলা থাকলেও। ফুটবল নিয়ে এতটাই সিরিয়াস থাকতেন মহম্মদ হাবিব।

একবার বড় ম্যাচের আগে হাবিব দা গেলেন মোহনবাগান সচিব ধীরেন দে-র কাছে। গিয়ে বললেন যে, আগামী বড় ম্যাচে হাবিব কে ছাড়াই যেন দল নামায় মোহনবাগান। শুনে থ মোহন সচিব। বলে কি বড় মিঞা। এরপর ধীরেন দে হাবিবকে বলেন, তা কি করে সম্ভব। হাবিব বলেন হাঁটুর ব্যথায় কাহিল তিনি। ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। হাজার টাকা লাগবে। সঙ্গে সঙ্গে ধীরেন দে হাজার টাকা দিলেন হাবিবের হাতে। টাকা পেয়ে হাবিব কাল ম্যাচ মে খেলেগা। এবং সেই ম্যাচে অসাধারণ ফুটবল খেলেছিলেন তিনি।

খেলা ছাড়ার পর যখন তিনি টিএফএ-র দায়িত্ব। সেই সময় রোভার্স কাপে দল নিয়ে মুম্বাই গিয়েছিলেন। তিনি মুম্বাই এসেছেন শুনে তাঁকে নিজের বাড়িতে ডিনারের জন্য আমন্ত্রণ জানালেন তাঁর খেলার অন্যতম ভক্ত রাহুল দেব বর্মন। সব শুনে আরডি -কে বড় মিথ্যা বলেছিলেন আমি যাবো। কিন্তু আমাকে ১০টার মধ্যে ছেড়ে দিতে হবে। তাই-ই করেছিলেন আরডি।
ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার আজহারউদ্দিন ও বড় ভক্ত ছিলেন মহম্মদ হাবিবের। শোন যায় আজহার হাবিবের আ ছুঁয়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন যদি আগামী জন্মে ফুটবলার হয়ে জন্মাতে পারি, তাহলে যেন মহম্মদ হাবিবের মতো ফুটবলার হতে পারি। এইরকম অসংখ্য গল্প ছড়িয়ে আছে মহম্মদ হাবিবকে নিয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *