প্রদীপ্ত চৌধুরী
সাংবাদিকতার কাজে টালিগঞ্জ-এর স্টুডিওপাড়ায় আমার প্রায় এক দশক (1994-2003) ধরে নিয়মিত যাতায়াত ছিল। মূলত শুটিং কভার করতে যেতাম। বহু ফিল্মস্টারের ইন্টারভিউ নিয়েছি। অনেক সন্ধ্যাই কেটেছে রঙিন প্রমত্ত ফিল্ম পার্টিতে। কত ছবির প্রিভিউ আর রিভিউ করেছি। অভিজ্ঞতা হয়েছে প্রচুর। সোশ্যাল মিডিয়া-য় তো সব কথা বলা যায় না। তাই বেছে বেছে দু’একটা অভিজ্ঞতার কথাই বলছি।
পর্ব এক
1996 সালের একটা ঘটনা আজও বেশ মনে পড়ে।
নিউ থিয়েটারস স্টুডিওয় একটা নতুন বাংলা ছবির মহরত কভার করতে গেছি। নায়িকা মুম্বইয়ের। সেখানে অবশ্য সবে একটা মাত্রই হিন্দি ছবি রিলিজ করেছে তাঁর। তা হোক। বলিউডের নায়িকা বলে কথা।
সকাল দশটায় মহরত। মোটামুটি সময়মতোই শুরু হল অনুষ্ঠান। নায়ক প্রসেনজিৎ। কিন্তু নতুন নায়িকাকে দেখে তো সবাই অবাক। এত সাধারণ দেখতে মেয়ে নায়িকা হল কী করে? চোখ-মুখে তেমন বিশেষত্ব নেই। হাইটও যথেষ্টই কম। কন্ঠস্বর তো রীতিমতো খারাপ। যেন বসে গেছে। জানা গেল, নায়িকার বাবাই এ ছবির প্রযোজক। সম্ভবত পরিচালকও। এবার ধোঁয়াশাটা কিছুটা কাটল। ছোট্ট একটা দৃশ্য তোলা হল। তার আগে মহরতে যেমন হয়, নারকেল ফাটানো, পুজো-আর্চা, মিষ্টিমুখ ইত্যাদি সবই প্রথা মেনে সুসম্পন্ন হল।
সবশেষে শুরু হল প্রেস কনফারেন্স। প্রোজেকশন রুমে আমাদের মুখোমুখি বসলেন নায়িকা। দেখতে সাধারণ হলেও তিনি কিন্তু যথেষ্টই হাসিখুশি। কথাবার্তায় একেবারে চৌখস। সাংবাদিকদের একের পর এক প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গেলেন সপ্রতিভ ভঙ্গিতে। সারাক্ষণ মুখে লেগে রইল মিষ্টি হাসি। হাসিটা কিন্তু বেশ সুন্দরই। মনে হয়, একেবারে অন্তরমহল থেকে উঠে আসছে নিখাদ।
পরবর্তীকালে বলিউডে রীতিমতো নাম করেছিলেন সেই নায়িকা। ইদানীং অবশ্য একটু কম দেখা যায় তাঁকে। কিন্তু কোনও সন্দেহ নেই, চেহারায় একটা লক্ষণীয় পরিবর্তন হয়েছিল তাঁর।
সেদিনের সেই বাংলা ছবিটির নাম ‘বিয়ের ফুল’। নায়িকা রানি মুখার্জি। হাসিটা কিন্তু এখনও সুন্দরই আছে তাঁর। পরবর্তীকালে তাঁর যে এতটা উত্থান হবে, সেদিন সেটা কিন্তু আমরা কেউ আঁচই করতে পারিনি।