মৃণাল সেনের জন্মশতবর্ষে অঞ্জনের ‘ চালচিত্র ‘

কলকাতা, ৮ মে, ২০২৪:১৯৮১ সালে মৃণাল সেনের পরিচালনায় তৈরি হয়েছিল ‘চালচিত্র’ । সেই ছবি থেকেই এক অর্থে জন্ম হয়েছিল অভিনেতা অঞ্জন দত্তের । মৃণাল সেনের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে তাই অঞ্জনের পরিচালনায় আসছে তাঁর ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণের ছবি ‘চালচিত্র এখন’ । গতবছর কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটি স্পেশাল জুরি পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছে।অন্যদিকে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে এই ছবির জন্য সেরা অভিনেতার পুরস্কার জিতে নিয়েছেন অঞ্জন। ছবিতে তিনি ছাড়াও অভিনয় করেছেন বিদীপ্তা চক্রবর্তী, শাওন চক্রবর্তী, সুপ্রভাত দাস, শেখর দাস, শুভাশিস মুখোপাধ্যায় ও মেঘলা দাশগুপ্ত। গতকাল শহরের এক অভিজাত হোটেলে মুক্তি পেল ছবির ট্রেলার।

ছবিতে অঞ্জনের আদলে যে চরিত্রটি রয়েছে তার নাম রঞ্জন।সেই ভূমিকায় রয়েছেন শাওন। তিনি জানালেন, “অঞ্জনদা অনেকদিন আগে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন গিটার বাজাতে পারি কিনা বা ইংরিজি বলতে পারি কিনা। আমি বলেছিলাম, ওই টুকটাক পারি। তারপর কয়েকদিন কথাবার্তা হয়েছিল। তারপর আবার সব চুপচাপ। আমি ভেবেছিলাম ছবিটা হচ্ছে না। হঠাৎ একদিন ফোন করে বললেন, হচ্ছে। আমি ততদিনে আশাই ছেড়ে দিয়েছি। তারপর একসময় ছবিটা হলো। তবে খুব কিছু প্রস্তুতি নিয়ে আমি আসিনি। কারণ দুটো মানুষ একেবারে একরকম হতে পারে না। আমি আমার মতো করেই অঞ্জন দত্ত হয়ে উঠেছি বলা যায়, তার জন্য ওঁকে নকল করতে হয়নি।”গীতা সেনের আদলে তৈরি চরিত্রে রয়েছেন বিদীপ্তা। “সামনে থেকে গীতাদিকে কখনও দেখার সুযোগ আমার হয়নি। যেটুকু দেখেছি ওই মৃণালদার ছবিতেই। তবে অঞ্জনদা যেভাবে গল্প শুনিয়েছিলেন তাতে খুব স্পষ্ট হয়ে যায় চরিত্রটা। কোনও ওয়ার্কশপ নয়, বরং এই ছবিটা যতদিন ধরে তৈরি হয়েছে, মাঝে-মাঝেই আমরা সকলে একসঙ্গে বসে আড্ডা দিতাম। তখন অঞ্জনদা মৃণাল সেন আর গীতাদিকে নিয়ে অজস্র গল্প বলতেন। সেই গল্পগুলো খুব পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দিয়েছিল দুটো মানুষকে। খুব ঘরোয়া, মা-মা একজন মানুষ ছিলেন। অথচ কী আধুনিকমনষ্ক আর কী শক্তিশালী অভিনেত্রী! এরকম একটা চরিত্রে কোনওদিন কাজ করতে পারব ভাবিনি” বললেন বিদীপ্তা।

মৃণাল সেন চেয়েছিলেন অঞ্জন তাঁকে নিয়ে এমন কোনও ছবি করুন যা তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে হবে। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি তৈরি করেছেন ‘চালচিত্র এখন’। মৃণালের আদলে তৈরি চরিত্রের নাম কুণাল। অঞ্জন নিজে রয়েছেন সেই চরিত্রে।“মৃণাল সেন না থাকলে আমি ছবির জগতে আসতাম না,” বললেন অঞ্জন। “হয়তো থিয়েটার বা অন্য কিছু করতাম। শুধু অভিনেতা নয়, কখনও সহকারী, কখনও লাইন প্রডিউসার, কখনও বন্ধু হিসেবে তাঁর সঙ্গে থেকেছি। আমার সঙ্গে ওঁর প্রথম দেখা হওয়া এবং একটা অন্যরকম সম্পর্ক তৈরি হওয়া এটা আমার মনে হয়েছে ওঁর সঙ্গে আমার পরবর্তী ছবিগুলোর অভিজ্ঞতার চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান। আমি মৃণালবাবুর স্তুতি করার জন্য এই ছবি করিনি। মানুষ যাকে ভালোবাসে তাকে প্রশ্ন করে, সমালোচনা করে। মৃণালবাবুর সঙ্গে আমার এইরকম সম্পর্ক ছিল। তিনি ভুল করাকেও উৎসাহ দিতেন। সেই সম্পর্কটা কেমন ছিল বা কীভাবে তৈরি হলো, কীভাবে তিনি আমাকে এই শহরটা চেনালেন সেই সব নিয়েই এই ছবি।”সুপ্রভাত রয়েছেন চিত্রগ্রাহক কেকে মহাজনের চরিত্রে। উৎপল দত্তের চরিত্রে রয়েছেন শেখর। মৃণাল সেনের ম্যানেজার মুকুলবাবুর চরিত্রে রয়েছেন শুভাশিস এবং অঞ্জনের স্ত্রী ছন্দা দত্তের চরিত্রে রয়েছেন মেঘলা। ছবিতে সুরারোপ করেছেন নীল দত্ত।

১৪ মে মৃণাল সেনের জন্মের ১০১ বছর পূর্ণ হতে চলেছে। সেই উপলক্ষে ১০ মে প্রেক্ষাগৃহে এবং হইচই ডিজিটাল মাধ্যমে একসঙ্গে মুক্তি পাবে ‘চালচিত্র এখন’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *